সাথে থাকবেন, নইলে পিছিয়ে পড়বেন - ৯

নবম পর্ব


বিদেশি সিনেমার সফল ব্যবসা সব বাবাদের জন্য উপহার

গত কয়েকদিন ধরে সরকারবাবু কলম ধরেছেন শিষ্যের ব্লগে।  আজ সরকারবাবু লিখবেন অধ্যাত্মিক সংস্থাগুলির সম্পর্কে উনার ভাঁড়ার উপচিয়ে।


শুরু করছেন উনি ব্রহ্মাবাবাকে দিয়ে - রাস্তায়-ঘাটে রিক্সায়-বাসে স্টিকার সাঁটানো থাকে “ ওঁ শান্তি “!

ইনারা শিববাবার ভক্ত কিনা জানা নেই কারন নামটা ব্রহ্মা দিয়ে শুরু।  যাইহোক, কলকাতার ভবানীপুরে একসময়ের লক্ষী জুয়েলার্স হঠাৎ স্ত্রী মারা যাবার পর অধ্যাত্মিক পথে পা রাখেন। তারই ফলাফল এই “ ওঁ শান্তি ”। যদিও উনারা সযত্নে এই কথাটি এড়িয়ে যান। আপনারা বলতে পারেন কথাটি কোথা থেকে পেলাম - ২০০৩ সাল থেকে এই ব্রহ্মাবাবাকে এক পরিচিতের মাধ্যমে দেখছি।  ইনারা অসংখ্য ছোট-ছোট বাড়ি ভাড়া নয়, বাড়ি কিনে সেন্টার চালান। দেশ-বিদেশ জুড়ে ইনাদের কারবার। সবাই ইনাদের ভাই ও বোন।  এই সংস্থায় কোটিপতি ও ভিখীরি দুদলই আসেন। কাজেই ধরে নিতে হবে প্রচুর টাকা। কোথা থেকে এল এই প্রশ্ন কিন্তু কেউ করবেন না, রাজনীতিক দলগুলির মতনই ইনারাও ক্ষমতাশালী। মুহূর্তে আপনাকে গুড়িয়ে দিতে পারেন ইনারা ! আপনার জল-রিক্সা-বাস-দোকানপাট সর্বত্র অসম্মানের ব্যবস্থা ইনারা করতে পারেন।  সরকারবাবুর শিষ্য ভুক্তভোগী।


এবার আসছি পতঞ্জলিবাবা।  যোগগুরু কোলগেটের বদনাম করে নিজের সুনাম কুড়িয়েছেন নিশ্চিত। যোগে রোগ সারে একথা বহুদিন ধরে বহু মানুষ করে দেখাচ্ছেন, কিন্তু নিশ্বাস ধরা-ছাড়া দিয়ে পতঞ্জলি যোগ-গুরু যেভাবে সফল ব্যবসা খাড়া করেছেন তা নিঃসন্দেহে অবাক হবার মতন।  যদিও ভেষজ ওষুধের কারিগরী ধরা আছে অন্য মানুষের হাতে।  শুধুই যোগাসনকে সম্বল করে একটা মানুষ নিজেকে বেচে দিয়েছেন। পিছনের মাথাটি কে জানতে ইচ্ছে করে!  বাবা একান্তে অনেকের সাথেই দেখা করেন যা সাধারন মানুষের জানা নেই। বাবা বলার দরকার আছে নাকি?


এবার আসি, শ্রী শ্রী … ইনার ভক্তকূল সমাজের মূলত ওপরের থাকের ছিল। পরে ইনি স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করে সর্বজনের জন্য হচ্ছেন।  ইনারও প্রচার দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে।  সবাই ইনারা গডম্যান। অর্থাৎ সাক্ষাত ঈশ্বর না হলেও ভগবানের দূত।


এক ভগবানের দূতের কথা সবাই দেখেছিলেন রামের সাথে আশা যুক্ত হয়ে, এখন রামের সাথে আরোও কিছু যুক্ত হবার পরিনতিও দেখছেন!  এই টাকাগুলো আসে কোথা থেকে ? এদের সাথে রাজনীতিক দলগুলির এতই দহরম-মহরম কেন? সবদলই একটি করে বাবা পুষে রাখেন কেন? সাধারন মানুষ গনেশপূজো করেন অর্থ মূর্তিপূজো করেন সেতো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ইনারা কাদের পূজো করেন!


ইনাদের সম্পদ হাজারো কোটি থেকে শুরু হয়।  অথচ শিক্ষিত মানুষ এই যেমন মনমোহন সিং, সুগত বসু ইনারা সারা জীবনেও এক-দু কোটি রোজগার করতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ আছে। আপনাদের কি মনে হয় এই স্বঘোষিত বাবারা এই দুটি মানুষের থেকে বেশি শিক্ষিত অথবা এদের থেকেও বেশি প্রতিভাবান !  মোদীবাবার এবার এই স্বঘোষিত বাবাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলিতে জোর দেবার দরকার হয়ে পড়েছে। অর্থ খোলাখুলি লিখতে হবে এরা কে-কতদূর পড়াশুনো করেছেন। টেলিভিশান চ্যানেলে কথা বলার আগে লিখে দিতে হবে এদের বিদ্যে-বুদ্ধির দৌড় !!


পতঞ্জলি বাবাকে দেখি কুস্তি করছেন গেরুয়া পরে। সঠিক বললে গেরুয়া হাঁটুর ওপর তুলে, জুতো পরে। সন্ন্যাসীর পায়ে জুতো !!

আরেকদল আছেন সাঁই ভক্ত। ইনারা নিজেদের খেয়ালেই বিশ্বাসের বশে চলেন। নিশ্চিত কিছু পান। যদিও সাঁই নাম নিয়ে অনেক সাঁই লীলাখেলা চালাচ্ছেন। এপলের হাতঘড়ি ব্যবহার করা মানুষও এদেশে সমাজসেবা করেন। ধন্য ও বিচিত্র আমাদের দেশ।

আপনি লাইমলাইটে থাকার জন্য সবকিছুই করছেন, তাই বলি অনেকদিন ধরেই বাচ্চাদের জন্য কুস্তির কম্পিটিশান অর্গানাইজ করুন স্কুলগুলোতে।  নামটা নাহয় আমিই দিয়ে দিলাম সুলতানের বদলে "বাল-সুলতান"। এই নামে অনেকগুলি ওয়েবসাইট সরকার-বাবুর শিষ্য কিনে রেখেছিল। এই গতকয়েকমাসে অনেক মানুষ সোজাসুজি ও ঘুরিয়ে বলেছেন ওয়েবসাইট বিক্রি করে দেবার জন্য। শিষ্য বিক্রি করেননি, কারন না জানায় ভাল।

লাইমলাইটে না থেকে “ বাল-সুলতান “ নাম নিয়ে ভারতবর্ষের পুরোনো কুস্তির প্রথাকে ফিরিয়ে আনুন বাচ্চাদের ইভেন্ট অর্গানাইজ করতে। পারবেন কি?


জানি আপনি ও আপনার সব ধার্মিক সহযোগীরা করবেন না বা পারবেননা, কারন নামটার মধ্যে আপনাদের এলার্জির উপকরনের ছোঁয়া আছে।  আপনাদের আঁতে ঘা লাগবে। আপনারা সকলে সন্ন্যাস ছেড়ে এখন যেটা হয়েছেন সেটা বলতেও সরকারবাবুর এখন অস্বস্তি হয়। ভয় হয় আবার না শুনি - ___ বাবা ও ___ মা ___ মামলায় জেলে।

বহুদিন ধরে সরকারবাবু শিষ্যের মাধ্যমে অধ্যাত্মিক সংস্থাগুলি দেখছেন। এদের কার্যকলাপ এখন উনি দেখেন আর হাসেন। শেষ করছেন এক বুড়ির গল্প দিয়ে -

বুড়ি বর মারা যাবার পর যৌবনে পালিয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে এক অজ্ঞাত কারনে। নানান কর্মের মধ্যে দিয়ে সংসার প্রতিপালন করেছেন। শেষে গুরুগিরিতে এসে থেমেছেন। ভারতবর্ষে সকলেই গুরু হতে চায় !

সকলেই ভগবানের দূত !

ছেলেবেলা কেটেছে সরকারবাবু শিষ্যের খড়গপুর আইআইটি'র গা ঘেঁষে। সেখানে দেখেছিল মুড়ি বানানোর মেশিনের আবিষ্কার। আজকে বাজারে যত মুড়ি পাওয়া যায় মেশিনে বানানো সেটি কোনোও একটি মানুষের উদ্যোগ ও উদ্যমের ফসল। সাধনার প্রয়োগসিদ্ধি। গতকয়েকদিনে পাওয়াই আইআইটি'র ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন বিল্ডিং-এ যেয়ে দেখেন ইনাদের কর্মকান্ড। শোনা কথা মাহীন্দ্রা স্করপিও গাড়িটি সরাসরি পাওয়াই আইআইটি থেকে প্রোডাকশানে যায়। ইনারা সমাজের জন্য কাজ করেন নিঃশব্দে। তফাত এটাই।

মনে হয় সময় হয়েছে ইনাদের কর্মকান্ড সংবাদমাধ্যমগুলি অন্তত প্রকাশ করে দেশের গুণীজনেদের সমর্থন করার।

এবার আপনা্রাই ধার্মিক বাবারাই ঠিক করুন - সাধু কে বা কারা ?

Comments

Popular Posts