উত্তরণ.....
লাইনটি এক বিখ্যাত লেখক অরহান পামুকের একটি বই থেকে তুলে নেওয়া। ভাল লেগেছিল, বেশ ভাল লেগেছিল প্রেক্ষিতটা। কত কথায় মানুষ সরাসরি বলতে পারে না ঘুরিয়ে বলে তার মানে ভিন্ন ভিন্ন বিভিন্ন সূত্র ধরে বার করার এক আনন্দ আছে। সকলেই উপভোগ করে আশাকরি। আমি তো বেশ মজা পাই যখন কেউ সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলেও কথা বলে ফেলে। আরোও বেশি আনন্দ হয় কেউ না বলেও বলে ফেললে।
একটু খোলসা করেই বলি - দিন চারেক আগের ঘটনা। মোবাইল স্টোরে ফোন এক্স্চেঞ্জ করতে গেছি, আমার জন্য নয় অন্য কারোও জন্য, স্টোরের ছেলেটি মুচকি হেসে বলল স্যার থোড়া ওয়েট করনা পড়েগা। স্টোরে কেউ ছেলেটির ওপরের ব্যাক্তিরা ছিল না, কাজেই সব সিদ্ধান্ত একলা নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বেশ খানিক ফোনে একে-তাকে ধরে পুরোনো ফোনের এক্স্চেঞ্জ প্রাইস বার করল। পুরোনো ফোনের ভ্যালু জানার পরই নিজের অজান্তেই একটা হাসি দেখলাম, হাসিটার ভেতরের অর্থ অন্যকিছু মনে হলো। সে যাইহোক যার ফোন সে ডিল ফাইনাল করলে আমরা নতুন মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে আসি। আসার ঠিক আগে কি মনে হলো প্রশ্ন করে বসি - কত লাভ হলো এই ডিল-এ ?
হেসে উত্তর আসে কিছু না স্যার। কি হবে?
ঠাট্টার ছলে উত্তর দিই সত্যি কথাটা বল আমি কিছু মনে করব না। শুধু মেলাতে চাই যা ভেবেছিলাম ঠিক কিনা?
ছেলেটি একরাশ লজ্জা মুখে নিয়ে সত্যিটা বলেছিল। ওর প্রফিট কতটা হলো তাতে কিছু মনে হয় নি, বরং বেশ ভাল লেগেছিল নিজের যা মনে হয়েছিল ওর হাসি দেখে ও তার লুকিয়ে থাকা মানেটা সঠিক ধরতে পেরে।
প্রায় একই ঘটনার সামনা দিন কয়েক বাদে আবার হলাম, শুধু স্থান-কাল-পাত্র-ক্ষেত্রর তফাৎ আছে, কিন্তু জানার উপায় নেই ও ইচ্ছেও নেই সত্যিটা কি জানার ?
সময়ের সাথে সবই বদলে যায়, বদলে যায় সত্যও কারন পুরোটা আপেক্ষিক। পূর্ণ সত্য বলে কিছু আছে কি?
বাতাস ফিসফিসিয়ে বলে উঠল আছে বন্ধু আছে, পূর্ণ সত্যও আছে তা তুমি জান - জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা রবে...
কাজের কথায় ফিরি আবার। একসময় স্যার নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর লেখায় পড়েছি, লেখাটা খুঁজে পায় নি অনেক চেষ্টা করেও গত কয়েকদিন ধরে, শুধু এসেন্সটাই বলার চেষ্টা করছি - - - আমার মত অতি ক্ষদ্রাকার কুৎসিত দর্শণ মানুষের প্রতিও এই বিশ্বের অর্ন্তনিহিত করুণা শক্তি কাজ করে যায়। আমি জীবনে চাকুরি করিতে চাহি নাই, ব্যাবসায়ী হইতে চাহি নাই, ...... শুধুই লেখক হইতে চাহিয়াছিলাম এবং হইয়াছি।
সমগ্র সত্তা দিয়ে সত্যিই যদি কেউ কিছু চেয়ে থাকে তা হওয়া অনিবার্য, কারণ এই বিশ্বের করুণা শক্তি যদি কিছু ধরেও রাখে তা শুধুই সত্তাটিকে তৈরির নিমিত্তে। এইটায় বিশ্বের করুণা শক্তির নিয়ম, কেউ কেউ বলেন - ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ।
জেঠু বলতেন, ফার্স্ট ডিজার্ভ দেন ডিজায়ার। আমি বলি - ফার্স্ট ডিজায়ার দেন ডিজার্ভ!
একটা ছোট্ট গল্প বলি, গল্পটি মুখ থেকে বেরিয়েছিল বহুদিন আগে এক বন্ধুর সাথে তর্কের খাতিরে। তখন খুব তর্কের নেশা ছিল, এখন ইচ্ছেই করে না বকবক করতে।
পাড়ার এক বখে যাওয়া ছেলে প্রেমে পড়ে এক বড়লোক বাড়ির সুন্দরী না হলেও চটকদার কিশোরীর। সে বেশ মাখমাখ প্রেম। বন্ধুরা মজা নিত আর বলত গুরু যাও বলে দাও। রাজকন্যে ও রাজত্ব একসাথে। একবার প্রেমের বিকার প্রকাশ করতে যেয়েও পারেনি, কারণ দুই বাড়ির আর্থিক ও সামাজিক তফাৎ।
মেয়ের বাবা বড় ব্যাবসায়ী ও ছেলেটির বাবা নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। একদম কমার্শিয়াল সিনেম্যাটিক প্লট। প্রেমের বহিঃপ্রকাশ না হওয়ায় ছেলেটি ধীরে ধীরে চুপ হয়ে যায়। থেমে যায় বখে যাওয়া। শুরু করে গাড়ির গ্যারেজে কাজ। উদ্দেশ্য গাড়ি চালিয়ে মেয়েটি এলে একটু সান্নিধ্যে আসা, কথা বলা।
নানা পরিশ্রমের ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ছেলেটির গ্যারেজের কাজ শেখে ও নিজের উদ্যোগ শুরুর দিকে নেশা চাপে। যদিও প্রেরণা সেই কিশোরী ও তার বাবার টাকা।
প্রায় বছর দশেক নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ছেলেটি নিজের ওয়ার্কশপ খোলে ও ব্যাবসায় দাড়িয়ে যায়। বছরখানেকের মধ্যে নিজের মোটরবাইক। ফল নিম্নবিত্তের সামাজিক উত্তরণ।
আজ সেই ছেলেটি বড় ব্যাবসার অংশীদার, হয়তবা তার প্রেমিকার বাবার চেয়েও বড়। এখন সেও গাড়ি হাঁকিয়ে গ্যারেজ নয় অফিস করে। কিশোরী এখন যুবতী, কিন্তু ছেলেটির প্রেম থাকলেও বহিঃপ্রকাশ নেই। এখন সে অর্ন্তপ্রেমে স্থিত।
শুধু একটা কথা না বললে অসমাপ্ত থেকে যায় - গ্যারেজের জীবনের শুরুতে কিশোরী এসেছিল গাড়ি সারাতে। স্বভাববশতই হাতে ধরিয়েছিল টিপস্। ব্যাস!!!
Comments