বেশ হয়েছে, কেমনটি !

  সকলে বলে ছেলেবেলার নানান ঘটনায় তৈরি করে দেয় আমাদের।  অলীকও তাই ভাবে তবে তার মাঝের নানান উপাদানের কথাও ভোলা যায় না।  আজ সকালে কোনোও এক চ্যানেলে অলীক শোনে সেই পুরোনো দিনের বিনাকা সঙ্গীতমালার কথা।  তার মত চল্লিশ পেরোনো মানুষের কাছে পরিচিত নাম।  বিনাকা পরে বদল হয়ে বিবিধ ভারতীতে হয় সিবাকা সঙ্গীতমালা।  কোম্পানীর নাম বদল আর কি!  একসাথে মনের কোনে ভিড় করে বিবিধ ভারতী, রেডিও সিলোন, নেপাল রেডিও...।  জানিনা হয়ত কোথাও কেউ এখনও শোনে এই রেডিও স্টেশনগুলি।  

যতদূর মনে পড়ে বিনাকা ছিল এক টুথপেষ্ট কোম্পানির নাম, যা বদল হয়ে সিবাকা হয়ে যায়।  নাম বদল প্রোগ্রামে কোনোও বদল আনে নি।  জনপ্রিয়তায় কোনোও ভাটা পড়ে নি।  সেই প্রথম হিন্দি গান শোনা তাও দূর থেকে।  তখন পাশের বাড়িতে থাকত পরিমলদা, খুব ছটপটে এক যুবক।  তার নিয়মিত বিবিধ ভারতীতে গান শোনা চাইই চাই।  আর আর এক শ্রোতা দূর থেকে বিনাকা সঙ্গীতমালার ফ্যান হয়েছিল।  সেকথা অলীকের মা ছাড়া আর কেউই জানার সুযোগ পায় নি।  চুরালিয়া হে দিল তো শনম শব্দের মানে না বুঝলেও মুখে ফুটেছিল গানের কলি, আর ছিল বাপি-মা’র মিচ্কি হাসি।  এখন বোঝে কি কি গান শুনেছে।  আর রেডিওতে শোনা যেত মহম্মদ রফি সাহেবের গান প্রায়ই।  তার শৈশবের হিরো পরিমলদা’র মত ফুটবল খেলার সাধ বড় বয়সে মিটিয়েছে সে, শুধু রাখা হয় নি বড় চুল রাখা কারণ বড়চুল ছিল বড়বেলার ঘোর অপছন্দের বিষয়।  

এই বিনাকা সঙ্গীতমালার কথা বলতে গিয়ে একটা কথা না বললেই নয় তা হলো গানের মানুষটিকে দেখার জন্য রেডিওর স্পেয়ার খোলা স্ক্রু-ড্রাইভারের সাহায্যে ও তার সাথে জড়িত বাপি’র আদর !!!  এখন অলীকের মনে হয় বহু মানুষের জীবনেই এরকম স্মৃতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।  আজ তার ছেলেকে খেলনাগাড়ির শ্রাদ্ধ করতে দেখলে রাগ হয় না, হাসি পায়।  মজা লাগে ভীষণ কারন সবসময় এই বোধ হয় একই প্রথা ফলো করে চলেছে তার উত্তরসূরী।  শুধু টিভিটা বা ল্যাপটপ খোলে নি - অলীকের কপাল ভাল!!! 

এতো গেল অতিশৈশবের কথা।  এরপর যখন একটু বড় হয়েছে চারপাশের আম-কাজু-পেয়ারা বাগানের দফারফা বন্ধুরা মিলে বহু করেছে।  তার পরিমান এতটাই যে মাঝে আম খাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছিল অলীক।  তারই মাঝে এক বাগান ছিল - দাদু’র বাগান।  জানিনা কেন ঐ নাম দেওয়া হয়েছিল কারণ কোনোও দাদুর সাক্ষাতই পাই নি অলীক তখনও।  বিধাতা অদৃষ্টে হেসেছিল।  এক ছুটির সকালে সকলে মিলে বড় মাঠে খেলার তাগিদে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছে।  তখনও সিটে বসে সাইকেল চালাতে শেখেনি, ওরা বলত হাফ-প্যাডেল সাইকেল চালানো।  বাপি’র সাইকেল, নিজের নয় এ বোধ হয় নি।  মাঠে কাউকে না পেয়ে মাঠের বদলে হাজির হয় দাদুর বাগানে।  সাইকেল রাস্তার ধারে রেখে সচ্ছন্দে ভেতরে ঢোকে কাজুবাদাম পাড়তে।  হঠাৎ কে রে …. কৈ দেখি তো ডাকে টনক নড়ে সকলের।
সকলে দে ছুট, কিন্তু অলীক তো ফেঁসে গেছে।  দাদু রাস্তার ধারে রাখা সাইকেল টেনে বাড়ির ভেতরে নেবার জন্য তৈরি।  সেই প্রথম দাদুকে দ্যাখে ও সাইকেলের আসল মালিকের বোধ তৈরি হয়।  বাপির অফিস যাবার একমাত্র সাধন!   
পড়েছিল উত্তম-মধ্যম দাদুর কাছ থেকে।  বিষয়টা শেষপর্যন্ত্য এক পাড়াতুতো কাকুর (সেই সময় রাস্তা দিয়ে পেরোচ্ছিলেন) মধ্যস্থতায় মেটে।  সেই শেষ!  আর দাদুর বাগানে ঢোকার সাহস হয় নি।
তার বেশ কয়েকবছর পর স্কুলফেরতা এক বিকেলে অলীক দ্যাখে একদল পাড়ার লোক বল হরি হরিবোল করে চলেছে  বয়সটা মৃত্যু কি বুঝলেও তার গভীরতা বোঝার বয়স হয় নি।  পেরোনোর সময় দ্যাখে দাদু শুয়ে।  মনেমনে একবার বলে - বেশ হয়েছে , কেমনটি  !    

Comments

Popular Posts