তবুও তৃণ জন্ম নেবেই .......
অলীক নিউজ পেপার দেখা ছেড়ে দিয়েছে, টিভি'র নিউজ চ্যানেলও দেখে না। কি করেই বা দেখবে ? যা সব চারিদিকের খবরের বহর। কোথাও দেখায় আন্দোলন, কোথাওবা জন্তুর জান্তব আস্ফালন। শুধু আস্ফালনই নয় এটাকে বলা উচিৎ জান্তব বহিঃপ্রকাশ।
একদিন শান্তভাবে অনেকবার ভাবার চেষ্টা করেছে সঠিক সমস্যাটা কোথায় এই সমাজের, উত্তর নেই। ঠিক কোন মানসিক অবস্থায় পৌঁছলে স্কুলের বাচ্চাদের রক্তাক্ত করা যায়। ঠিক কোন পাগলামির সীমা ছাড়ালে ধর্ম-অধর্মের তফাৎবোধ হারিয়ে যায়। সমাজবিজ্ঞানী, পরিবেশবিজ্ঞানী, বা মানসিকরোগ বিশারদেরা হয়ত উত্তর খুঁজছেন আজীবনকাল ধরে, হয়তবা উত্তর পেয়েও পান নি তারা। কিন্তু একথা ঠিক এই সময়কালে আমরা নিমেশের জন্যও থামিনি। আরোও বেশি করে বলা ভাল আমরা থমকে দাড়ায় নি। স্তব্ধ হয় নি আমাদের জীবনযাত্রা। কিছুদিন আগে দেখেছি যুদ্ধের নামে বাচ্চাদের ওপর যান্ত্রিক পেশীর আস্ফালন, আর এখন দেখছি ধর্মাধর্মের নামে পেশীর আস্ফালন।
অলীক থামে নি, স্তব্ধও হয় নি তার জীবন। ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠেছে, ব্রেক্ফাস্ট করেছে, সময়ে অফিস গেছে। বাচ্চাকে স্কুলে ছাড়ার সময় ভিতরটা কেঁপে উঠেছে। কিন্তু ভুলে গেছে অফিস পৌঁছে সেই রক্তাক্ত বাচ্চাদের কথা। আমরা ভুলে যাই, সবাই ভুলে যাই। থামতে পারি না, থামাতেও পারি না। শুধুই ভেতর জুড়ে মুহূর্তের হাহাকারে ভেসে যাই। অলীকও তারই মাঝে এক সাধারণ মানুষ। পেপারের পাতায় চোখ রেখেছিল প্রথম দিন। ব্যাস!!! সব শেষ। আর খোলে নি টিভির চ্যানেল। রক্তাক্ত বাচ্চার হাত-পা কি করে দেখা যায়!!!
সকলের কথা অলীক জানে না শুধু নিজেকে ক্ষতবিক্ষত মনে হয়। এ ক্ষত সারবার নয়। আজীবন বয়ে বেড়াবার। একসময় সিনেমা'র প্রেমে পড়ে ছিল তারই ফসল হিসাবে নানান ভাষার নানান স্থানের নানান কালের সংস্কৃতির পরিচয় পেয়েছিল। সময়ের সাথে প্রেম বদলে যায় এখন প্রথম প্রেম বই। তারই মাঝে রসদ খোঁজে জীবনের সবুজ সুরগুলিকে ছোঁবার, কিন্তু একোন নিউজ চ্যানেল যা সবুজ জীবনের সুরগুলিকে কেড়ে নেবার খবর দেখাতে বাধ্য হয়। দেখব না প্রতিজ্ঞা নিয়েই সব বন্ধ করেছে অলীক। শুধু বন্ধ হয় নি খাওয়া-পরা ও শ্বাস নেওয়া। বন্ধ হয় নি হাসি-মজা-আনন্দ-সুখানুভুতি। অলীক বোঝে না এই কেমিস্ট্রির রহস্য ??? বাচ্চাগুলো শুধু তার নয় বলেই কি সে একভাবে থাকতে পেরেছে। কিছুই ফাঁকি পড়ে নি তার জীবনে। একোন অলীক! সেই কোন ছেলেবেলায় সে পড়েছিল - অন্যায় যে সহে অন্যায় যে করে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে। ঘড়ির দিকে নজর যায় অলীকের। ছেলের ড্রয়িং ক্লাস শেষ হলো বলে। এবার বেরোতে হবে। বেরোতেই হবে কারণ সবুজেরা থেমে থাকে না। সবুজের বিকাশ রোধ করার শক্তি নেই স্বয়ং শক্তিমানেরও এই বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকবে মানবজীবন ধর্মা-ধর্মের বলির খাড়ার ঘা খেয়েও অলীকেরা । আবার কোনোও এক রক্তাক্ত দিন কেড়ে নেবে সবুজ জীবন, কেড়ে নেবে সব সবুজ তবুও তৃণ জন্ম নেবেই।
Comments