এ দিল মাঙে মোর....

" Illusion is the object " এই কথাটার সাথে পরিচিত হই প্রায় বছর বিশেক আগে।  এটাই নাকি সিনেমার উদ্দেশ্য!  অনেক জল-বাতাস-আলো পেরিয়ে আমি বলি আমার কথা।  গতকাল দেখেছি হায়দার সিনেমাটি।  একসময় সিনেমার নানান খুঁটিনাটি বিষয়ে নাক গলানোর প্রবণতা ছিল যা আজ সময়ের সাথে সাথে তা হারিয়েছে বললেই হয়।  এখন সিনেমা দেখি সিনেমা দেখার জন্য, মানসিক খাদ্যর জন্য, পুষ্টির জন্য।

বেশ কিছুদিন আগে একটা সিনেমা দেখেছিলাম শিপ অফ থিসিয়াস।  মনে রাখার দুটি কারন আছে, এক- সিনেমাটির গুনে, দুই- তারচেয়েও বড় সিনেমাটি দেখেছিলাম আমার একান্তই সহধর্মিনীর সাথে।  এখন সে নেই থাকলে হায়দারও দেখতাম একসাথে একভাবে।  শিপ অফ থিসিয়াস সিনেমাটির ভিসুয়্যাল কোয়ালিটি অন্যমাত্রার ছিল, সৌন্দর্যের অনুভুতিতে কোনোও অসুবিধে হয় নি, হায়দারেও অসুবিধে হয় নি।  ধন্যবাদ পঙ্কজ কুমার - দুটি সিনেমারই ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি!

ভারতীয় সিনেমায় গল্প অর্থে স্টোরি সবসময়ে বিরাট মাত্রা পেয়েছে তার প্রমান পাই সিনেমাটির ইন্টারভ্যাল-এ গুটিকয়েক সিনেমা বানানোর পেশার অথবা অন্য কোনোও পেশার মানুষের আলোচনায়।  ইন্টারভ্যাল-এ বাথরুমের কাজ সারতে গিয়েও শুনি স্টোরিটা একটু স্লো কিন্তু প্রোগ্রেশান আছে, আলোচনার বিষয় হায়দার।  মনে পড়ে গেল কথাটা শুনে একটা পুরোনো কথা- প্রোগ্রেশান যদি ডেভেলাপমেন্ট না ঘটাতে পারে তাহলে সেই প্রোগ্রেশানের মূল্যায়ন সঠিক হয় না।  হায়দার সিনেমাটিতে অনেক প্রোগ্রেশানের ডেভেলাপমেন্ট পেতে অসুবিধে হয়েছে।  স্যারি ডিরেকটার সাহেব কিছু মনে করেন না যেন।  যদিও ফোটোগ্রাফি (ফ্রেমিং-কম্পোজিশান), মিউজিক, সাউন্ড, প্রোডাকশান ডিজাইন, এডিট অনেক কিছুই ঢেকে দিয়েছে।  অসাধারণ! সত্যিই অসাধারণ!!

এক সময়ের পড়া কথা আজ রিপিট করতে ইচ্ছে করছে - খন্ড হতে সমগ্র এবং সমগ্র হতে খন্ড।  এই পুরোটা নিয়েই সিনেমা।  সিনেমার সত্তাটা বেঁচে থাকে এই শুধু এই বিষয়টির ওপর।  যিনি সিনেমা বানান তিনি সবসময় প্রার্থণা করেন সত্তাটা যেন বেঁচে থাকে।  মাঝে মাঝে হারাতে বসলেও হায়দারে ফের সত্তা নিজের জায়গায় দাড়িয়ে গেছে।  শটের ওপর শট জুড়ে মালা গেঁথে তৈরি হয় একটা সিনেমা।  প্রতিটি শটের যোগে তৈরি হয় অন্য মানে, তৃতীয় মানে।  একটি শটের মিসপ্লেসমেন্টও মালার সৌন্দর্য্য নষ্ট করতে পারে - হায়দারে বেশ কিছু আছে তাই বেশ কয়েকবার মনোযোগ হারাতে হয়েছে।     

কোনোও এক সিনেমার জগৎ-এর দিকপাল একবার বলেছিলেন ভারতীয় সিনেমার সাথে হলিয়ূডি সিনেমার তফাৎ আছে।  আমরা গানের ব্যবহার করি সিনেমায় সফলভাবে।  সম্পূর্ন একমত না হলেও বলি - সিনেম্যাটিক ফ্লো হ্যাম্পার না করে গান ব্যাবহার হয়েছে এমন দুটি ভারতীয় সিনেমার নাম করছি, আশাকরি সকলে একমত হবেন - মেঘে ঢাকা তারা, গুপি গাইন বাঘা বাইন।  হায়দারের ডিরেকটার সাহেবের কাছে প্রত্যাশা বেশি তাই হ্যাংলার মত চেয়ে বসি সেই চেতনার প্রকাশ যা তাকে অন্য মাত্রার অন্য স্থানে বসিয়ে দেবে ও আমাদের মত সাধারন মানুষের চেতনায় নতুন পুষ্টির খোরাক দেবে।

শেষ করি এই বলে- কাশ্মীর নিয়ে অনেক সিনেমা হয়ে গেছে, মন বড়ই কাঁদে এই সব সিনেমা দেখলে।  সহ্যের সীমা মাঝেমাঝেই অতিক্রম করে; বসা যায় না দাঁড়ানো যায় না, কাঁদা যায় না ভাষায় প্রকাশ করাও যায় না।  জানি না কোনোও কাশ্মীরি অনুপ্রাণিত হবেন কিনা এই সিনেমা দেখে!  জানি না রাষ্ট্রীয় শক্তি গুলির চেতনা জাগবে কিনা এই সিনেমা দেখে!  জানি না কোনোও শিশু ফের অনাথ হলো কিনা এই সিনেমা দেখার ফাঁকে!! 

একটা কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে লোভ সামলাতে পারছি না - ইন্তেকাম ও আজাদি'র লড়াই আমায় ইন্স্পায়ার করতে পারে নি।  প্লিজ আরোও বেশি কিছু.... অ্যাড ফিল্ম-এর ভাষায় - এ দিল মাঙে মোর.... 

তবুও শেষে বলি টিম হায়দার থ্যাঙ্ক য়ূ!!      

  

Comments

Popular Posts