সুহাস
ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে গলির এই জায়গাটা পেরিয়ে বড় রাস্তায় হেঁটে ওঠা এক ঝক্কির ব্যাপার। সময়-সময় মনে হয় যদি খুব বড়লোক হোত বা জাদু-মন্ত্র বলে যা চাইবে তাই হবে - ঠিক যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। সাত-পাঁচ ভাবতে-ভাবতে একটা ট্যাক্সি এসে জল ছিটিয়ে পালায়। ব্যাস, প্যান্ট-এর দফারফা। কাদাগোলা জলে সে এক কিলেকেত্তন। মিঁউ-মিঁউ শব্দে মনটা ফেরে - এক বেড়াল বাচ্চা, ফেন্সিং-এর ধারে ভিজে সপসপে। সুহাস বাচ্চাটিকে তুলে হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে।
বিকেল গড়িয়ে রাত্রি। সুহাস এই দোতলা বাড়িতে একা। ভালোই হলো সাথে একটা প্রানী জুটল, একাকিত্বের সাথী। অনেকদিন পর সে নিজের জগৎ-এর বাইরে এক জগৎ পেল। সাদার ওপর কালো ছিট্ছিটে বেড়াল বাচ্চাটি চুপটি করে বসে; মাঝেমাঝে নাক সিঁট্কোয়, চোখ দুটো দেখে মনে হয় বদ্ধ ঘরটা একটু অবাক করলেও রাস্তার পরিবেশের চেয়ে আপাতত ভাল।
সুহাস একা, তাই খাবার কোনোও ঠিক নেই; কখনোও বাইরে তো কখনোও ঘরে। বাবা-মা যাবার পর বেশ কিছু বন্ধু আসত, পরে সকলেই যাতায়াত কমিয়ে দেয়। এখনতো কেউই ..।
আজ বেড়ালটার কথা ভেবেই পাঁউরুটি ও দুধ কেনে সুহাস। ছোটো থেকে কখনও কাউকে খাওয়ায়নি; এই প্রথম। পাঁউরুটি সেঁকে, দুধ গরম করে পরিস্কার একটা বাটি নেয়, ঠিক্ঠাক ছিঁড়ে ভিজিয়েও দেয়। চুকচুক করে পুরো দুধটা সাবাড় করে পাতা বিছানায় এসে শোয় বাচ্চাটি, বেশ আপন করে নিয়েছে।
রাত্তিরে শুয়ে সাত-পাঁচ চিন্তা করে সুহাস। তার জীবনের নানা ভাল দিকের সাথে একটা খারাপ দিকও আছে - সে নির্বান্ধব। এই প্রথম তার অনুভূতি এল বন্ধুত্বের। পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে গেল তার। শেষ কবে অমিত-এর সাথে কথা হয়েছে খেয়াল নেই। দেওয়াল ঘড়িটায় চোখ পড়ে। অনেক রাত হয়েছে। এমুহূর্তে ফোন করার সিদ্ধান্তটাই বিরতি দেয়। মনে পড়ে ত্যাগীর কথা - লোরেটোতে পড়ত। ভারী সুন্দর গানের গলা মেয়েটির। শেষ দেখা হাওড়া স্টেশন-এ। কি একটা পড়তে বাইরে যাবে। স্থির করে পুরোনো সকলকে সকাল হলে ফোনে ধরতে হবে।
ভোরবেলা নীতার ঘুম ভাঙতেই দেখে পঁাচটা। তাড়াতাড়ি উঠে ব্যাস্ত হয়। ডাক পাড়ে- সুহাস। স্কুলে যেতে হবে। ওঠ।
দু-চোখ কচলে, সুহাস মাকে আদুরে গলায় বলে - জান মা, কাল রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি।
মা'র অত কথা শোনার সময় কই!
সুহাস, কাঁধে ব্যাগ, স্কুলে যেতেযেতে ভাবে - "সুহাস বড় হয়েছিল, এক রাতের জন্য"।
Comments