বন্ধ ঘর

বন্ধ ঘরে বসে আছি চুপটি করে, বেরোনোর তো চেষ্টা করি কিন্তু পারি কই? সবাইতো সবইতো তোমারি ইশারায় নাচছে। এই তুচ্ছাতিতুচ্ছের কথা শুনছে কে?
পেয়াদা বলে বসে থাক। সিপাই বলে বসে থাক। মন্ত্রী বলে থাক্ বসে । আর রাজা? তার তো দেখায় নেই।
শেষমেষ ঘরেই আনন্দের রসদ খুঁজতে বসি। অন্ধকার ঘরে বসে থাকার মজাই আলাদা শুরুতে বুঝিনি। সময়ে পেরোলে বুঝি ছোট্ট আলোর কনাও তোমার অন্ধকার ঘরে বসে দেখা যায়। আর শুরু হয় প্রতীক্ষা কখন নতুন আলো আসবে, দেখব, জানব, খেলব আলোর সাথে। প্রতিটি কনার লুকোনো আনন্দ জানান দিয়ে যায়, বলে, " বসলেই হবে, চুপটি করে বস আমরা আসব খেলব ভাসিয়ে নিয়ে যাব আলোর সমুদ্রে। " এযেন ঢেউ-এর সাদা ফেনা, শুধুই আনন্দে মাখা হিরের চমক।
তিরতির করা অনিশ্চয়তাভরা গলায় প্রশ্ন করি, " তোমাদের দুঃখ নেই? "
আলোর কনারা সমস্বরে জবাব দেয়, " আনন্দের উল্টো পিঠেই দুঃখ। সেখানেও আমরা আছি, তবে ঘুমিয়ে। ফিসফিসিয়ে ছোট্ট এক আলোর কনা বলে শুধু তুমি না দেখলেই হলো। "
ঠিক বুঝি না উত্তর, অস্পষ্ট হালকা রেখা দাড়ি টেনে দেয় আনন্দ ও দুঃখের। ভিতরের বিপ্লবী সত্তা হেঁইসা মারো বলে ডাক পাড়ে, কিন্তু তাও ক্ষনিকের। সল্পকালীন বিরোধ তো জয়ী হওয়ার জন্য নয়। সে যাই হোক রোধ-প্রতিরোধ পেরোলে, অনুরোধের-উপরোধের পালা, তাও পেরোলে শুরু হয় আসল খেলা। নত হওয়ার খেলা। এযেন ছেলে ভুলোনো, সবাই বলছে খেলছে শচীন!
আমি চুপ, বলার শক্তিটাই তো হারিয়েছে। এখন শুধুই দেখার পালা, অবাক হয়ে দেখি আর লজ্জায় মরি। কতই না সহজে খেলা ভাঙছে-গড়ছে। ভাবি আমরা আসলে তোমরা। একটার পর একটা ঢেউ নরম মাটিতে আছড়ে পড়ে আর পা ভিজিয়ে চলে যায়। কখনও তোমার ইচ্ছে হলে ঢেউ-এর প্রকোপ বাড়ে কখনও কমে। আর আনন্দে থাকে বুদবুদেরা, ক্ষনস্থায়ী কিন্তু মুহুর্তের আনন্দে গলে যায় হারিয়ে যায় মিশে যায় জলে। ঢেউ, বুদবুদ, জল সবই শেষে মিশে গেছে তোমাদের আলোর কনায়।
পা-এর কাছে পড়ে থাকা একটা ছোট্ট আলোর কনা বলে আমাকে দেখেছ। ভাল করে দেখ। মাখামাখি হয়ে আছি আঁধারে ও আমিতে অথচ আলাদা। ঠিক এইরকম, মিলে আছে অথচ আলাদা। হারিয়ে গেলেই দুঃখে, ফিরে পেলেই আনন্দে।
নিচু হয়ে ছোট্ট কনাকে তুলে নিই। আলতো গায় হাত বুলিয়ে কানাকানি করি - " সকলে ভাবে খেলছি আমি, খেলছি আমি!!! আর আমিতো দেখি খেলছ তুমি। সবাই বলে যে জিতবে তারই জয়গান। পন করেছি তোমায় নিয়ে তোমার সাথে খেলব আমি; হারবে তুমি, জিতব আমি। যদিও জানি জিতলে আমি জিতবে তুমি এই তো খেলার সার। "
যেইনা বলা সারা শরীরে ছোট্ট আলোর কনার দুরন্ত বেগে বিস্তার শুরু, হাত ছাড়িয়ে পা ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে ওপরে বিস্তার শুরু হয় আলোর কনার। নিমেষে বন্ধ ঘর আলোয় আলোময়! ফিরে দেখি নিজেকে, আমিও আমিতে নেই শুধুই আলোর কনা। বন্ধ ঘর বন্ধ নেই ... কখন যেন আলোর কনারা তালা খুলে দিয়ে গেছে।

Comments

Popular Posts