পুরুতবিদেশ.কম
পল্টা একটি ছেলে। সে কখন পল্টন থেকে পল্টা হয়ে গেছে নিজেই জানেনা। পাড়ার সকলের কাছেই সে কার্টুন। কাজের কাজ কিছু নেই, সারাদিন শুধু প্ল্যান ভেঁজে চলেছে। তার এখন খেয়াল হয়েছে দেশে তো অনেক হোল, একবার বিদেশ যাওয়া যাক । যদি ভাগ্য ফেরে। তা আর কি করা। শুরু হোল কাজ, পড়াশুনা বেশি নয়। পাশপোর্ট-ভিসাও নেই। অগ্যতা…
পল্টার চেহারাটা একটু বলে নেওয়া ভাল। কান দুটো বড়। চুলগুলো ছোটো করে ছাঁটা। গোঁফটিও পাতলা-ছোটো। পুরো কার্টুন!
আজ সকাল থেকেই মনটা খারাপ পল্টার। পকেটে বেশি টাকাও নেই আর হাতে কাজও নেই যে টাকা আসবে। হঠাৎ পেপারে চোখ পড়ে -- পুরুত চাই বিদেশে। পোড়া মনে আশার আলো জাগে! www.purutbidesh.com সাইটের নাম। নিজের পৈতের দিকে একবার দেখে নেয়। ভাগ্যিস্ বামুনের ঘরে জন্মেছিল! ঠোঁটটা কামড়ে ভাবে আজকেই খোঁজ নিতে হবে।
খানিকবাদে পল্টা লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোয় নতুন পৃথিবীর খোঁজে। সাইবার কাফে! ইনটারনেট সার্ফিং। বেশকিছু ডেটা নিয়ে উনি ফিরে আসেন আকাশ থেকে মাটিতে। অর্থাৎ ম্যাজ্নায়িন ফ্লোর ছেড়ে একতলায়। রাস্তায় বেরিয়েই মোবাইলের ডাক। স্পাইরাল কল করেছে। পল্টা ওর নাম স্পাইরাল রেখেছে কারন ওর মাথায় জিলিপির মত প্যাঁচ। কিছু লুজ টক সেরে এগোয় নিজের আস্তানার দিকে। দুপুরের খাওয়াটা মেসেই সেরে বেরোনোর প্ল্যান করে। এরপর সাতপাঁচালি করতে করতে সকাল গড়িয়ে দুপুর। তাড়াহুড়ো করে পাসপোর্ট অফিস হয়ে খবরাখবর নিয়ে ভিড়ের রাস্তা ছাড়িয়ে ঢোকে ডানদিকে। রাস্তার ওপারে ট্রান্স্কেয়ার নামের একটা গ্লোসাইন-বোর্ড ঝুলছে। বড় বড় করে লেখা পাসপোর্ট-ভিসা করানো হয়। বেশ কায়দা করে একটা ট্যাক্সিকে পাশ কাটিয়ে রাস্তার ওপারে যায়। পাতলা লিকলিকে দারোয়ানের সাথে টুকরো কথা সেরে পা বাড়ায় দোতলার অফিসে। লম্বা শেপের রুম। পল্টা তার শকুনের মত দৃষ্টি নিয়ে তাকায় -- সেই ছাঁচে বাঁধা অফিস ঘর, স্টিলের চেয়ার, হালকা বাদামী টেবিল, ও অতিঅবশ্যই এক তন্বী-তরুনী রিশেপসানিস্ট! এদের কিছু গতে বাঁধা ট্রেনিং দেওয়া হয়-- শরীর দুলিয়ে, মাপা হাসি-মাপা চাউনি- মাপা কথার ভাঁড়ার। সে তার মোহিনী শক্তি নিয়ে ক্লায়েন্ট বধে ব্যাস্ত। পল্টা তার দুরুদুরু বুকে মোহিনী শক্তি এড়িয়ে তথ্যের ভাঁড়ার জোগাড় সেরে বেরিয়ে আসে। দীর্ঘশ্বাস নেয় আর ভাবে যাক একটু এগোনো গেল আজকে।
পিলে চমকে এক মোবাইক পেরিয়ে যায় ফ্যাট্ ফ্যাট্ শব্দ করে। সাইলেন্সার খুলে গেছে। পল্টা সোজা তাকায়। মোড়ের মাথায় উইচিংড়ে চেহারার এক কন্স্টেবল। ঠিক তার পাশে বসে এক ভুড়িওয়ালা মুড়িওয়ালা। যেন দেবা-দেবী! পারফেক্ট কম্বিনেশান! সত্য সেলুকাস -- কি বিচিত্র এই তিলোত্তমা কলকাতা!
কলকাতা নাম মনে আসতেই মনে পড়ে কয়াল ব্রাদার্স-এর কথা। মাথাটা বনবন করে ঘোরে। মনে পড়ে যেতে হবে একবার কে-লিংক-এর মিটিং-এ। কলাভবন। এই এদের এক ব্যাবসা, বলে নলেজ বেস্ড। আসলে কে-বেস্ড। মানে কলকাতা, কালনা, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, কর্ণগড়, কোদালিয়া…….. সব কে-গুলোকে লিংক করতে পারলেই সাকসেস।
এত কে'র ভীড়ে একটা কচুরির দোকান নজরে পড়ে। পল্টার মাথায় ছবি ভাসে কাঁচালঙ্কা, কাসুন্দি। জিভে জল নিয়ে পল্টা ঢুকে পড়ে কচুরি খেতে। চুলোয় যাক মিটিং।
পরদিন সকাল। পল্টা চলেছেন হারু ব্যানার্জীর বাড়ি। উনি খুব নামকরা পুরোহিত। জ্ঞানের আকর। পূজোআচ্চা বাদেও আরোও কিছু পেশা রয়েছে সেগুলো নাহয় উজ্ঝই থাক। দরজার বাইরে থেকে পল্টা ডাক পাড়ে-- হারু দা.. ও হারু দা।
বেরিয়ে আসেন তাঁর জাঁদরেল স্ত্রী ও শুরু হয় প্রশ্নের পর প্রশ্ন। সে প্রায় জেরা একরকম। শেষমেষ হারুদা বেরিয়ে এলে ভেতরে বসার ব্যাবস্থা হয়। সব শুনে হারুদা তার স্বভাবসিদ্ধ জ্ঞানের ছটা ছড়িয়ে বলে ওঠেন-- পূজো করা কি চাট্টিখানি কতা। এখন কিছুদিন থাক আমার সাথে। সামনেই দূগগা পূজো। চল কিছুদিন আমার সাথে। তবে তো। সবেরইতো ট্রেনিং দরকার।
পল্টা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর ভাবে, আবার এক গুরু….
শিয়ালদহ স্টেশন। হারুদা চলেছেন বীরের মত বুক উঁচিয়ে। ট্রেন ধরতে হবে। ধুতি, পাঞ্জাবী ও মাথায় ছোট্ট টিকিতে লাগছে বেশ। হারুদা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় পান চিবোতে চিবোতে বলেন, "দেখবি দেখবি যজমান বাড়ি কেমন খাতির পাস। আমার শিষ্য বলে কতা। ভাল ভাবে থাকিস।" পিঠটায় চাপড়িয়ে দেন উৎসাহ দেবার উদ্দেশ্যে।
পল্টাকে বিদেশ যেতে হবে…। অগত্যা চুপচাপ সব হজম করাই ভাল। একবার বিদেশ পৌঁছে গেলে কে কাকে পোঁছে!
শেষপর্যন্ত ট্রেণ পেরিয়ে, বাস পেরিয়ে দুজনে পৌঁছয় কাটোয়া। সেখানের বড়াল বাড়ি। গয়নার ব্যাবসা। টাকার কুমির যাকে বলে। হারুদা শর্ট ইন্ট্রোডাকশান দেন ওদের ওপর। সবাই অপেক্ষায় ছিল তাদের জন্য। যেতেই হাজির জল, চা, মিষ্টি। পল্টা বেচারি তখনও দাড়িয়ে বোঁচকা-বুঁচকি নিয়ে। কি আর করা যায়। গুরু তখনও রাখতে বলেননি।
হঠাৎ হারুদা চ্যাপ্টা নাক বাড়িয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলেন, "অ্যা হেঁ…….. তুই এখনও দাড়িয়ে। বোঁচকা দুটো রেখে বোস। আঙুল দেখিয়ে দেয় নিচের মেঝেতে।"
পল্টা কি আর করে। বোঁচকা দুটো রেখে নিচেই বসে। হারুদা তার আধ খাওয়া মিষ্টির প্লেটটা বাড়ায় পল্টার দিকে। পাশের মিটিমিটি হাসির মেয়েটি ধরতে গেলে হারুদা বাধা দেয়, বলেন, "গুরু প্রসাদ বলে কতা! ওটা ওর প্রাপ্য।"
রাত্রিবেলা। দুজনে এক ঘরে শুয়েছে। হারুদা ওপরে খাটে, ও পল্টা মেঝেতে। কি আর করে- গুরু-শিষ্যতো, একস্থানে কি করে শোয়।
হারুদা খাটের ওপরে পা দুলোচ্ছে আর পল্টা শুয়ে শুয়ে ঝকমারি চিন্তায় ব্যাস্ত। বাড়িটা বেশ বড়। সবাই একসাথে থাকে। খাওয়া-দাওয়াটাও জম্পেশ হল। বাড়ির সব বৌ-ছেলেরাও ভাল। ভারি মিষ্টি কতা। তারই মাঝে মিটিমিটি হাসির শাড়ি পরা মেয়েটির ছবি ভেসে ওঠে। আজ খাওয়ার পাতে এক্সট্রা রসগোল্লা দিয়েছে, তাও মিচকি হেসে। মনটা বড় ভাল হয়ে যায় পল্টার। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সুখ-সপ্ন সবে ভাবতে শুরু করেছে, হারুদার ডাক-
হ্যাঁরে, আমার যজমান বাড়ি কেমন লাগল?
ভাল। বেশ ভাল।
আচ্ছা শোন, ওপরে উঠে আয় তো একবার।
পল্টা কিছু না ভেবেই পাজামা ফতফত করতে করতে ওপরে ওঠে। হারুদা সুর নরম করে বলে- একটু পা টা টিপে দিবি? বড় কষ্ট হচ্ছে।
অগত্যা! কি আর করা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর রোগা লিকলিকে হাতে হারুদার পা টেপে সুখ-সপ্নের বদলে। ভাবে, বিদেশ যাবার কত ঝক্কি!
পরদিন ভোর হতেই ঘুম ভেঙে যায়। ঝটপট চোখ কচলে দেখে হারুদা নেই। লম্বা পা ফেলে লিকলিকে শরীরে বেরিয়ে আসে। বাড়ির এক বৌ-এর সাথে দালানে দেখা। সে হেসে বলে, কি গো ছোটো ঠাকুর ঘুম হোল? বড় ঠাকুর তো কলঘরে গেছে। তুমিও যাও। পূজোর তো সময় হয়ে এল প্রায়।
পল্টা তার গামছা নিয়ে কলঘরের দিকে পা বাড়ায়। তাড়াতাড়ি কয়েক মগ জল ঢেলে বেরোয় যদি হারুদা খোঁজ করে। ঝটাপট স্নান সেরে মন্ডপের চৌহদ্দিতে। আটচালার মন্ডপ। বাড়িটাও বেশ বড়। চারিপাশটা গাছে ঘেরা। বাড়ির সকলের চোখে-মুখে আনন্দের জোয়ার। ভেসে যাচ্ছে খুশিতে। শুধু মুখ গোমড়া ছোটো বৌমনির। সকলে বলাবলি করছে- প্রথম বছর তাও বর ছাড়া। কি করবে বর কাজ করে আর্মিতে ছুটি পায় নি। বোধহয় খুব কেঁদেছে কাল রাতে গাল ফুলে রয়েছে।
যাইহোক হারুদার ডাক পড়ে পল্টার উদ্দেশ্যে, "কি রে তুই তো ছোটো বামুন, অ্যাসিস্ট্যান্ট। কাছে আয় সব বাড়িয়ে দে। তা না বসে-বসে গিলছে।" কি গিলছে তা আর বলে না হারুদা।
পল্টা লজ্জায় পড়ে যায়। বাড়ির বৌ-রা সব এগিয়ে দিচ্ছে। পল্টা এগিয়ে বসে হারুদার কাছে। হাত লাগায়। একটার পর একটা সাজিয়ে রাখে হারুদার কাছে। মিষ্টিগুলো বাড়ানোর সময় পেটটা চিনচিন করে। টের পায় খিদে পাচ্ছে। কিন্তু পুরোহিতের অ্যাসিস্ট্যান্ট! খায় কি করে?
প্রায় ঘন্টা তিনেক পর ছুটি পায় পল্টা। এবার খাওয়া যাবে। ঘরের দিকে পা বাড়াতে যেয়ে ফিসফিস করে কানের কাছে বলে, " দেখেছিস কি রকম সম্মান। বাড়ির বড়-ছোট সকলেই প্রণাম করছিল। তুইও থাক কিছুদিন। দ্যাখ কি হয় তোর।"
পল্টা মৃদু হাসে আর ভাবে একবার পুরোহিতের লাইসেন্সটা পাই তারপর তো…….. বিদেশ যাত্রা কে রোখে!!!
রাত্তিরে যথারীতি হারুদা খাটের ওপরে পল্টা নিচে। মাঝে হারুদা ডাক পাড়েন পল্টাআআ…. অর্থাৎ তোমার সময় হয়েছে পা টেপার। কি আর করা…. মুখ ভার করে পা টেপাটেপিতে ব্যাস্ত হন পল্টা। খানিক পর হারুদা নাক ডাকছেন ও পল্টা নিচে পা নাড়ছেন। তিনি এখন পৌঁছে গেছেন নদীর পাড়ে কল্পনায়। রাতজাগা স্বপ্নের গতিবিধির ওপর তো কারোও হাত নেই। আজ বিকেলে নদীর ঘাটে গেছিল বাচ্চাগুলোকে নিয়ে সাথে ছিল ড্যাঁঙস-ড্যাঁঙস একটি মেয়ে- ঐ যে সেদিনের মিটিমিটি হাসির মেয়েটি, নাম করবী। কথা বলে বেশ। সবসময় নাচছে। এযেন রক্তকরবীর নন্দিনী। মনের কোনে এক সুখস্বপ্ন নিয়ে নিদ্রায় যান পল্টা!!!
দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েকদিন। পূজো শেষ। পল্টা এখন এক্স্পিরিয়েন্স্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট!
ট্রেনে বসে পল্টার পেটে আর ঢাকা থাকে না, কথাটা পেড়েই ফেলে হারুদার কাছে, "হারুদা এখনতো পুরোহিতেরা সবাই দেশের বাইরে পূজো করতে যায়। এমনকি হেঁজিপেজিরাও। আপনার মত জ্ঞানী-গুনী মানুষ না গেলে চলে। চলুন না আমরা দুজনে ঘুরে আসি।"
হারুদা গলার স্বর গম্ভীর করে ঘাড় ঘোরান, বলেন, " বলছিস।"
পল্টা সায় দেয় ঘাড় নেড়ে।
আচ্ছা বেশ কি করতে হবে বিদেশ যেতে হলে?
ঠোঁট কামড়ে উত্তর দেয় পল্টা, " খরচা আছে। পাসপোর্ট-ভিসা করাতে হবে। দালাল আছে, তাদের না ধরলে হবে না। তার ওপর পূজো কমিটির সাথে ইন্টারনেটে যোগাযোগ করতে হবে। ওগুলো অবশ্য আমার ওপর ছেড়ে দেন।"
হারুদা কি এক চিন্তা করে কোঁচোড় থেকে টাকা বের করেন হাজার পাঁচেক। হাতে ধরিয়ে বলেন সামনে কালী পূজো। সব ব্যাবস্থা পাকা করে নে চটপট।
ফিরে এসে বিশ্রাম নেবারও সময় হয় নি পল্টার। মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করে রয়না দেয় ট্রান্স্কেয়ারের দিকে। পৌঁছে দেখে রিসেপশানিষ্ট বদলে গেছে। পল্টা ভাবে লে হালুয়া আবার নতুন করে শুরু। যাইহোক ভদ্রমহিলাকে ঠিকঠাক বুঝিয়ে হাজার তিনেকে রফা করে, মানে পাসপোর্ট-ভিসা সবকিছুর দায় তাদের, মানে দালালির পয়সা! কাজেই পল্টার পকেটেও কিছু থাকার জোগাড় হোল। তবে মোহিনী মিষ্টি সুরে শরীর দুলিয়ে বললেন, " আমি কিন্তু স্বরস্বতী পূজোর আগে কিছু ব্যাবস্থা করতে পারব না। জানেনই তো ইউ.এস. ভিসার কি ঝক্কি। এখন কানাডা দিয়ে শুরু করুন পরের বছর ইউ.এস. পাক্কা।"
অগত্যা!! কি আর করা। একটু হলেও দীর্ঘশ্বাস ফেলে পল্টা বেরিয়ে আসে ট্রান্স্কেয়ার থেকে।
সন্ধেবেলা পল্টা হাজির হয় হারুদার বাড়ি। দেবা বাড়ি নেই। ভাবছে ফিরে যাবে। বৌদি মিঠে সুরে গান গাইলেন, "একটু বস এক্ষুনি চলে আসবেন তোমার দাদা।"
অবাক হয় পল্টা বৌদির ব্যাবহারে। মুখে মিষ্টি হাসি শেষ কবে দেখেছে মনে করতে পারে না। তবে কি হারুদা বৌদিকে কিছু বলেছেন?
নিশ্চিত হয় মিষ্টির প্লেট দেখে সাথে কফির কাপ। কথা না বাড়িয়ে সব সাঁটায় পল্টা। কে জানে কখন মতিভ্রম হয় ভদ্রমহিলার। সব সেবা বন্ধ। যা জাঁদরেল এক মহিলা!!
সব সেরে ভীত সুরেই পল্টা বলে, " বৌদি উঠি। হারুদা এলে বলবেন একবার ফোন করতে। কাল বিকেল তিনটেয় যাবার কথা।"
রাত্তিরের খাওয়া সেরে সবে শুয়েছে ফোন। হারুদা।
- তু….তু…তুমি কোথায় থাকবে কাল তিনটেয়?
পল্টা অবাক হয় তুই থেকে তুমি এক ধাক্কায়। কথা শেষ করে ঘুমোতে গেল বারোটা প্রায় বাজে।
পরদিন দুপুরে ট্রান্স্কেয়ারের গেটের সামনে পল্টা দাড়িয়ে। হারুদা ও বৌদি দুজনেই নামলেন ট্যাক্সি থেকে। বৌদির আবার চোখে রোদ চশমা! পল্টা বেশ মজা পাচ্ছে এসব দেখে। মোহীনি যথারীতি দুজনের ইচ্ছে দেখে মাল খেঁচার ধান্ধায় সুর গান, " বুঝতেই পারছেন পল্টাবাবু দুজনের বদলে তিনজন হলে তো খরচা একটু বাড়বেই।"
- সে কি? তিনজন কখন হোল? আমি আর হারুদা!
হারুদা পাশ থেকে বলেন, " না মানে বৌদি একলা থাকবে তাই সকলের কথাই ভাবলাম।"
-কিন্তু কত এক্স্ট্রা পড়বে?
মোহীনি ঝোক বুঝে কোপ মারে, " তাও প্রায় হাজার তিনেক বাড়বে।"
- তা লাগুক। টাকা দেবে গৌরি সেন। বৌদির হাতের গুঁতোয় হারুদার চৈতন্য ফেরে।
মাথা নাড়েন হুঁ হুঁ করে।
মোহীনি আবার বলে, "কিন্তু গ্রুমিং-এর জন্য কিছু ক্লাস এ্যাটেন্ড করতে হবে। খরচা আছে।" বৌদির গুঁতোর ভয়েই হারুদা সব কিছুতেই মাথা নাড়েন। শেষে বেরোনোর সময় পিঠে হাত রেখে হারুদা বলেন, " বৌদির খরচার ভাগাভাগি হয়ে যা বাঁচবে তাই আমাদের দুজনের!"
তিন মাস পর হারুদা, বৌদি, পল্টা ফ্লাইটে ওঠার দৃশ্য একরকম এই- হারুদা ধুতি, বৌদি জিন্স ও কুর্তা, আর পল্টার নিজের কথা নাহয় থাক। পল্টা সেই যে গেল ফেরৎ এল না। হারুদা-বৌদি ফিরলেন পূজোর পরই।
দীর্ঘ দশ বছর পর কলকাতা এয়ারপোর্ট-এ পা রাখেন পল্টা। আজ সে নামি-দামি প্রতিষ্ঠিত পুরোহিত মশাই!
Comments