ওঁঃ জিম জিমাও নমহঃ। ।
"শরীর না মন" এই ছিল ডিবেট-এর বিষয়। ডায়াসে দাড়িয়ে সুদিন হাততালি ভালই কুড়িয়েছে। কলেজের সকলেই জানে একমাত্র প্রতিদন্ধী রীতা।
রীতা ছিল মন পক্ষ ও সুদিন শরীর। রীতাও কম যায় না। একেই বুদ্ধিমতী তারওপর ডানাকাটা পরি না হলেও আকর্ষনীয় ব্যাক্তিত্ব।
সুদিন শেষ পর্যন্ত এও বলে ফেলে আমারই এক সাথী সুন্দরী-বুদ্ধিমতী সহপাঠী। আমি কি তার প্রতি আসক্ত হব না? জয় সবসময় সৌন্দর্যের হয়। সকলেই বোঝে কে সেই ব্যাক্তিনি। কার উদ্দেশ্যে এই ঠেস দেওয়া কথা। হাততালি মাত্রাতিক্ত পড়ে। বলার সময় আড়চোখে দেখে সে। মিচিমিচি হাসি লুকিয়ে ছিল ঠোঁটে আজ এত বছর পরেও ভুলতে পারে না রীতা।
জবাব রীতা দিয়েছিল সুদিনকে তবে ডায়াসে নয় গড়ের মাঠে। বাদাম খেতে খেতে। সে কথা নাহয় থাক।
দুই বিতর্কের সাথী রীতা ও সুদিন আজ সহবাসী। স্বামী-স্ত্রী। একজন ইউনিভার্সিটির কেউকেটা সোসিওলজির প্রফেসর ও অন্যজন নামীদামী আধুনিক স্কুলের ওপর তলার শিক্ষিকা। সেই পুরোনো শরীর ও মন বিতর্ক আজ জীবনে দেখা দিয়েছে।
আজ কাকে প্রাধান্য দেবে ঠিক করতে পারে না রীতা। কখনোও মন বড় কখনোও বা শরীর। প্রায় ছ-মাস হয়ে গেল স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক যোগ নেই। অথচ কোনোও অভাবও বোধ করে না। না, দুজনের কেউই না। এইতো সেদিন লীলা, তার সহকর্মী মুখফুটে কত কথাই না বলল। ওদের দুজনের রাত্তিরের গল্প, কতই না রঙীন ছবি দুজনে বুনে চলে রাত্তির গভীর হলেই। বিয়ে তো হয়েছে অনেকদিন, প্রায় একই সময়ে। তাদের ছেলের বয়স প্রায় সাত-আট। আলাদা বিছানা-রুম সব ব্যাবস্থাই করেছে ছেলের জন্য।
রীতাকে মুচকি হেসে প্রশ্ন করে, " কিরে তোদের কি খবর? আমরাতো এখনোও ফুলসজ্জের দিনেই আছি। ভালই আছি। আমার ডাক্তার তো বলে- গুড সেক্স-লাইফ ইনক্রিসেস ভাইটালিটি। তোদের তো ছেলেমেয়েও নেই। একদম গড়ের মাঠ৭।"
লজ্জায় পড়েছিল রীতা। লীলাটা ওরকমই, কোনোও রাখঢাক নেই। অনেক চাপাচুপির পর জবাব দেয় তাদের শারীরিক সম্পর্ক প্রায় ছ-মাসের ওপর নেই।
বলছিস কি? তার মানে তোরা বেঁচে নেই! নিচু স্বরে স্কুলের টিচার্সরুমে বলে, "তোর বর অন্য কোথাও কিছু তলে তলে.. ইঙ্গিত করে অন্য কিছুর।
রীতা হেসে ফেলে। বলে না রে ও অন্যরকম।
লীলা এক ঝটকায় বলে, " কেনরে স্বয়ং দেবাদিদেব না কি? ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। তারওপর সিনিয়র। কতই স্টুডেন্ট, কার সাথে কি করে কে জানছে…হয়ত দ্যাখ স্পেশাল ক্লাসের নামে… বলে চুপ করে মিটিমিটি হাসে.."
রীতার রাগ হয়েছিল যদিও হেসে ফেলে পরে। রাত্তিরে ডাইনিং-এ দুজনে বসে লীলার কথা আলোচনা করতে গেছে সুদিন সযত্নে এড়িয়ে যায়। বলে, পরে কথা হবে। চাপ আছে। অনেক কাজ পেন্ডিং। এখন ঘুমোতে যায়। কাল ইম্পর্ট্যান্ট লেকচার।
পরদিন লীলা-রীতার জোর আলোচনা। দুই বন্ধু একইসাথে জয়েন করেছে, বিয়েও প্রায় সময় মেনেই। শুধু রীতার তফাৎ একটাই তাদের বাচ্চা নেই। স্বামী-স্ত্রী দুজনে তা নিয়ে কোনোও চিন্তাভাবনাও করেনি। এমনকি ডাক্তারও দেখায় নি।
লীলা টিচার্স-রুমে ফিসফিস করে কানের কাছে বলে, " ফোনের ম্যাসেজ বক্স চেক করিস। মেইল চেক করিস। মেইল আইডি-পাসওয়ার্ড জানিস। মাঝে মাঝে ফোন করিস অফিস টাইমে। আমার তো ভাই ডাউট হচ্ছে। আমারটাতো সুযোগ পেলেই আদেখলাপনা করতে থাকে।"
এই চলে তাদের কথা। রীতা সব শোনে, উত্তর দেয় না। মনের কথা মনেই থাকে। সেওতো মানুষ। কতদিন আর লীলার কথা হেসে উড়িয়ে দেয়। রাত্তিরে একদিন অনেকদিন বাদে নিজেকে সাজিয়ে হাজির হয়েছিল বিছানায়। সুদিনকে জড়িয়ে ধরেছিল। বিরক্ত সুদিন অবাক চোখে দেখে কিছু না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
দুপুরে টিফিন আওয়ার্স-এ লীলা উৎসাহ নিয়ে গাঢ় চোখে ইঙ্গিত করে, "কি রে কিছু এগোল?"
রীতা মুখ শুকনো করে মাথা নাড়ে। মাথায় সারাদিন এখন ঐ চলছে। কি করে। ক্লাসেও মন দিতে পারছে না। এ যেন এক ধর্ম সঙ্কট। শরীরের ডাক কেন নেই তার উত্তর খোঁজার পালা। লীলা স্কুল ফেরতা রীতাকে নিয়ে বেরোয়। এমন সব ভুজুং-ভাজুং দেয় যে কান লাল হয়ে আসে। এসব প্রশ্ন কেউ করে রীতা ভাবে।
যাবার আগে হাত নেড়ে লীলা বলে, "ওরে সেক্স ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। প্রকৃতির নিয়ম। পুরুষ ও নারী। সৃষ্টির আদিঅকৃত্তিম সঙ্গী। কাল থেকে জিম শুরু। ঠিক হ্যায়। পেটের থলথলে চর্বি নিয়ে কি…. একটা কুতসিৎ ইঙ্গিত ছুঁড়ে দেয়।"
রীতা লজ্জার মাথা খেয়েছে। একবার লীলাকে সুযোগ দেওয়া মানেই এবার শুরু হবে। যাইহোক জিমের ইন্স্ট্রাকটারের সাথে কথা হওয়ার সময় খুব লজ্জা লাগছিল। লীলা যেভাবে বলল, "আমার বন্ধুর শেপটা একটু ঠিকঠাক করে দিতে হবে। মানে অ্যাট্রাক্টিভ। পেট বেরিয়ে এসেছে। চর্বির লেয়ার বাড়ছে।"
ইন্স্ট্রাকটারের ব্যাবহার খুবই সংযত, কিন্তু মুখের হাসি মিটিমিটি রীতাকে লজ্জায় ফেলার পক্ষে যথেষ্ট।
"ম্যাডাম, কখন আসবেন? আমাদের মেয়েদের সিডিউল সকালে হলেও বিকেলে আলাদা প্র্যাক্টিসের অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে। আপনি কার্ডিও দিয়েই শুরু করুন। দেখুন ডেভেলপমেন্ট। তারপর বাকি এগোবেন।"
রীতা ঘাড় হেলায়। লজ্জায় মুখ নিচু করে। লীলা কি কি বলেছে ভগবানই জানে। ছেলেটা কি ভাবছে কে জানে। ছিঃ।
লীলা তাড়া দেয়, "চল, চল। সব কথা তো হয়ে গেল। কাল থেকে শুরু। দ্যাখ এবার কি হয়।" রাস্তায় বেরিয়ে বলে, " সুদিনের শরীরের বাবা জাগবে। নারীর মোহিনী শক্তি বলে কথা। স্বয়ং কামদেবের শক্তি।"
মাস দুয়েক পেরিয়েছে রীতার জিম যাত্রা! এখন শরীর বেশ হালকা বোধ হয়। ভেতরটা খালিখালি। ওয়েট অনেকটায় ঝরেছে। হাত-পা গুলো টানটান। স্কিনটাও উজ্জল। বয়স বেশ খানিক কমেছে বোঝা যায় রাস্তায় বেরোলে। দেখার লোক বেড়েছে। নিজেকে বেশ আয়নায় দেখতে ইচ্ছে করে। বাথরুমে সময় কাটায় বেশ খানিক। নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নানান ভঙ্গিমায়। তন্নী-তটিনী। কটিদেশ ধীরে ধীরে থলথলে মাংসলভাব ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। এমনকি বুক-কাঁধ সবেরই এক্স্ট্রা চর্বি ঝরেছে। ব্রা'র সাইজ বিয়াল্লিশ কমে ছত্রিশ। সবে মিলিয়ে সেই যেন কলেজ লাইফের ফিগার যা দেখে সুদিন মোহিত হোত, সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরার তাল খুঁজত। রাত্তিরে আঁচড়াত-কামড়াত আর রীতার শরীরের ওম জাগিয়ে দিত। নিজের পায়ের দিকে নজর পড়ে, সুন্দর সুডোল গোছটা ভালই হয়েছে, নিজেরই ভাল লাগছে। বেশ সেক্সি সেক্সি ভাব এসেছে। মাথায় একটা প্ল্যান ভাঁজে। অনেকদিন চুড়িদার-জিন্স এসব পরে নি। আজ একবার ট্রাই করলে হয়। আধুনিক স্কুল। অনেক টিচারই পরে আসে।
বাথরুম থেকে টাওয়েল জড়িয়ে বেরোয়। এখনোও লজ্জা কাটে নি। যদিও বাড়িতে কেউই নেই এবং সুদিনের সারা শরীরের কোনোও অংশ দেখতেও বাকি নেই। বিয়ের প্রথম প্রথম যা করত ভাবলে সারা শরীরের লোমকূপ খাড়া হয়ে যায়। দিনে-রাতে ফাঁক পেলেই গা-ঘেঁষাঘেষি। তারপর কোনও এক অজ্ঞাত কারনে ধীরে ধীরে নিঃসাড় নিস্তেজ হয় দাম্পত্য জীবনের উত্তাপ। দেখা যাক! দীর্ঘশ্বাস নেয় রীতা।
আজ স্কুল থেকে ফিরে মনটা বেশ প্রফুল্ল। স্কুলে অনেকেই দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে। আপার ক্লাসগুলোয় বোঝা যায় সৌন্দর্যের গুরুত্ব। বেশ কিছু ছাত্র-টিচারের মুগ্ধতা উথলে ওঠে কথায় ব্যাবহারে চোখে-মুখে। এই তো আজ ম্যাথস্-এর স্যার বলেই ফেলল- কি ব্যাপার??? চোখ উঁুচিয়ে ভুরু নাচিয়ে। আর লীলার কথা বলাই ভার। মনে হয় সেই তার প্রেমিক। আজ চুড়িদারে দেখে বলে, "আমিই বোল্ড হয়ে গেলাম। সুদিনের কি হবে কে জানে! কপাল!!"
রীতা বোঝে তার ফিগারটা বেশ ধারাল হয়েছে। শরীরের জেল্লাও বেড়েছে। বয়স কমেছে প্রায় বছর দশেক। এখন দেখলে তিরিশের আশেপাশে বোধহয়। অথচ মেদ না ঝরালে কেউ বলতেই পারতো না আসল বয়স কত? চল্লিশের কোঠায় ঠেকেছে প্রায়। এইতো কালই জিমের ইন্স্ট্রাকটর লোলুপ দৃষ্টিতে শরীরের জরিপ করছিল। দর্শকাম!!! বোঝা যায়। সব বোঝা যায়। মেয়েরা সব বুঝতে পারে। কেউ লুকিয়ে বা কেউ সরাসরি। দেখে সবাই। চাপা ইচ্ছে সকলেরই থাকে, শুধু কেউ কেউ ছাইচাপা দিয়ে রাখতে পারে।
রাত্তিরে নাইট ড্রেস চেঞ্জ না করে পরেছে টাইট স্ল্যাক্স ও টপ। বেছে বেছে কালার কম্বিনেশান, পিঙ্ক-ভায়োলেট ও সাদা। শরীরের সব বাঁকা চোরা গলি ফুটে বেরোচ্ছে। চুলটাও একটু ছেঁটেছে সপ্তাহখানেক আগে। এসবই লীলার পরিকল্পনা। পেডিকিয়োর-ম্যানিকিয়োর-এর কল্যানে হাত-পায়ের গ্লেজ বাড়বাড়ন্ত। নখের পরিপাটিও কম নয়। যত্নও নিয়েছে বেশ এ-কমাসে। ফল- সুদিন এখন বেশ কয়েকদিন তাড়াতাড়ি ফিরছে, দৃষ্টিও বদলেছে, বাড়ছে রাত্তিরে ডাইনিং-এ গল্পের মাত্রাও। যদিও রীতা বুঝেও অবুঝ। রাত্তিরে হাত মাঝেমাঝেই শরীরে এসে পড়ছে- যেন ঘুমের ঘোরে কিছু খেয়াল নেই। সাবধানে রীতা হাত সরিয়ে দেয়। ইচ্ছে করেই আলাদা শোয়ার প্ল্যান করে আজকে। দেখাই যাক না বাবুর কত কলেজের মিটিং-এর চাপ।
রাত্তিরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ায়, আড়চোখে দেখে সুদিন আধশোয়া। একটু নড়েচড়ে উঠে বলে, "কি ব্যাপার বলতো তোমার জেল্লা বাড়ছে? শরীর বদলাচ্ছে। গেটআপ বদলাচ্ছে।"
রহস্যময় হাসি ছুঁড়ে দেয় রীতা। বোঝে সবই বোঝে কোথায় লাগছে। বাবুর শরীর জাগছে। বিছানার পাশে এসে বালিশটা তোলে। সুদিন অবাক চোখে বেবাক বলে, "কি হোল?"
"আজ থেকে আলাদা শোয়া।" হেসে উত্তর দেয় রীতা। "অনেকদিনতো একসাথে শোওয়া হল।"
এসবই লীলার শেখানো। আজ মাসদুয়েক পইপই করে পাখিপড়ার মত শেখাচ্ছে। মেন্টর কাম ফ্রেন্ড। স্কুল ফিরতি পথে আজই বলে, "তোর লুক বদলেছে। এবার সময় হয়েছে আলাদা শোবার। দেখবি মাঝরাতে বিছানায় ছটপট করছে। ভুলেও তাকাবি না, আহা বেচারি করবি না। কাছে আসতে দিবি। ছুঁতে দিবি না।"
কিছু বলে নি সুদিন। পরদিন কিছু না বলেই সুদিন বেরিয়েছে ভোরবেলা। ফিরেছে প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে।
এভাবে কেটেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক। ভোর হলেই বেরিয়ে যায়। রীতা প্রায় ঘাবড়ে যেয়েই লীলাকে লাঞ্চ রুমে বলে, " কি রে আমার তো ভয়ই করছে। কথা প্রায় নেই। আলাদা শোয়া। এ তো প্রায় ডিভোর্স-এর সামিল!"
তুই চুপ কর। দেখই না কি হয়। সন্ন্যেসী হয়ে কতদিন থাকবে। ঘি-আগুনে জ্বলবেই। প্রকৃতির নিয়ম বদলায় না।
রীতা চুপ করে। ভাবে দেখাই যাক না। ড্রয়িং রুমের ডিভানে শোবার ব্যাবস্থা করাই ছিল। লাইট অফ করে বালিশে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শোয়। একবার ভাবে কাঁদবে। বালিশ জড়িয়ে আর কতকাল শোয়া যায়! মাঝরাতে ঘুম ভাঙে বাবুর ছোঁয়ায়। পাশ ফেরে। কিছু বলে না। মটকা মেরে পড়ে থাকে বিছানায়। বোঝে খেলা শুরু। পতিত জমিন আবাদের খেলা। লাঙল চষছে সর্বত্র। অন্ধকারে মেলায় দুটি শরীর, দুটি শব্দ। শব্দের ওপর শব্দ। শব্দের খেলা! চোখ মেল্লেই সব শেষ। দুজনেই। অবিরাম শান্তি।
কথা বলে নি। দুজনেই। সকালে যে যার কাজে। আবার অপেক্ষা রাত্তিরের!
স্কুলে লীলাকে কিছুই বলে নি আজ। রাত্তিরে আবার মেতেছে বন্যতায়। আদিমতায়। শান্ত মন। শান্ত শরীর। মাসদুই বাদে জমিন আবাদের খবরে আনন্দে নাচে দুজনে। আগমনী সংবাদ। সুদিন খুশি। খুব খুশি! একপাক দিয়েই নেয় রীতাকে কোলে তুলে। আর রীতার লজ্জা!
লীলাকে বলায় কটমট করে তাকায়। একগাল হেসে বলে দেবাদিদেব তুষ্ট হয়েছেন তাহলে। এবার জিম বন্ধ।
স্কুল থেকে ফেরার পথে জিমের বাইরে ইন্স্ট্রাকটরের বাইকের দিকে তাকায় আর ভাবে- ভাগ্যিস জিম ছিল! মনে মনে জিমকে প্রণাম জানায়।
Comments