সং সার
ওরে মন... ও আমার মন...
গুনগুন করতে-করতে সিঁড়ি ভাঙে রুপক। আজ মনটা বেশ খুশিই আছে। পকেটে কিছু আমদানি হয়েছে। ফকটাই!
চাকরি জীবনের শুরুতে ফকটাই শব্দটার কথা ভাবলেই পুরোনো স্মৃতি সব ভিড় করে। ধীমানদা পাশের ডেস্ক-এ বসত আর হেসে বলত রুপক একটা সময়ের পর বুঝবি সব গরুই গোয়ালের খাবার খায়। রাত্তিরের খাবারের সাথে গোবর একটু লাগবেই। গোবরটাই শুদ্ধি।
লাজুক হেসে এড়িয়ে গিয়েছে সেসময় ধীমানদার কথা। বাম রাজনীতির ফসল সে। কলেজ লাইফেই স্টুডেন্ট পলিটিক্স। তারই হাত ধরে অরুনিমার সাথে প্রেম। পরিনতি পলিটিক্স-এর দাদাদের হাত ধরে এই আবগারি দফতরে চাকরি। প্রায় উড়তে-উড়তে এসে অরুনিমার হাত ধরে বলেছিল - চাকরিটা হয়ে গেছে। এবার দুজনে সংসার!
তখনও রুপক সংসারের কেঠো-মেঠো রুপটি নজর করেনি। নজর করেনি বাপির ঘাড় নুয়ে যাওয়া সংসারের জোয়াল বইতে-বইতে।
বাপিকে প্রণাম করে বলতে শুকনো হেসে বলেছিল - আমি ভেবেছিলাম তুই ল-পাশ করে ওকালতি করবি। স্বাধীন হবি। একটু হাঁফ ছেড়ে বলে - যাক বিধাতার লিখন কে খন্ডায়।
চাকরির পর বিয়ে। বিয়ের পর ট্রান্সফার। এই জলপাইগুড়ি শহরে এসে বসা। সেখানেই ধীমানদার সাথে আলাপ। বেশ সদালাপী মানুষ ছিল। হঠাৎ অফিসে এসে বলল, " বুঝলি চাকরিটা ছেড়েই দিলাম।"
কি করবে ! কি করে চলবে ?
একলা মানুষ ঠিক চলে যাবে। এবার শুরু করব সমাজসেবা।
মানে!
পলিটিক্স। বুঝলি না। সুদিন দাদার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কাউন্সিলার হতে হবে।
তাতে তোমার কি হবে?
দেখ, আমার তো একটা প্রাণ। বিশবছর সার্ভিস হয়ে গেছে। পেনশন পাব।
কিন্তু তুমি কি ঐ খিস্তি-খেউড়েদের মাঝে থাকতে পারবে?
তোকে বলেছি না রাত্তিরের গোবরটাই শুদ্ধি। মানুষের জন্য কাজ করব এটা কি বড় কথা নয়?
মানুষের জন্য কাজ কি আজ কোনোও নেতা করে?
করে রে বাবা করে। এই তো সুদিনদা কত মানুষের জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছে দিন-রাত।
রুপকের কাছে এর জবাব নেই। তবে পাল্টা চাল চেলে বলে - দাও না তোমার সুদিনদা কে বলে আমার ট্রান্স্ফারটা করিয়ে। বাড়ি ফিরে যায়। কতদিন কলকাতায় নন্দনে যায় নি, অ্যাকাদেমিতে থিয়েটার দেখিনি ...
সুদিনদা দেখেছিল, ধীমানদাদা কেও দেখেছিল। সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি।
আজ প্রায় বছর পনেরো বাদে ধীমানদাদা কাউন্সিলার পদ ছাপিয়ে অনেক পথ এসেছেন। রাজ্যের রাজপাট-এর বদল হয়েছে। বাম-ডান সব বদলে ডান-বাম মিলমিশ খেয়ে গেছে। এখন ধীমানদাদা মন্ত্রী!
রুপক তার বিভাগ বদল করে ধীমানদাদার আপ্ত-সহায়ক! কোথায় লেনিন-মার্কস বিলাপ করে তার ঠিক নেই তবে রুপকের কমিউনিজ্ম কাপড় পাল্টে কনজিমারিজ্ম-এর তত্তে বদলেছে। সময় রুপককে শিখিয়েছে ডান-বাম মিলেমিশে সবই ভাম!
অরুণিমা এখন শাড়ি ছেড়ে জিন্স-এ না এলেও রঙ-বেরঙা চকচকে রুপসজ্জার ভান্ডারে উপস্থিত হয় মেয়েকে সাথে নিয়ে। ছেলের বায়নাক্কার শেষ নেই। মোটরবাইক কোম্পানির ঝকঝকে বিজ্ঞাপনের দৌলতে রুপকের পকেটের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে এক-কামরার ফ্ল্যাট, সেখান থেকে এখন তিন-কামরা!
সরকারি ভান্ডারের থেকে তিন-কামরার ফ্ল্যাট ভাবাটাই অন্যায় হলেও ধীমানদাদার কল্যানে সবই সম্ভব হচ্ছে।
প্রাণ হাঁসফাঁস করত শুরুতে এইসবের মাঝে। রাত্তিরের ঘুম উড়ুউড়ু প্রায়। অরুণিমা বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে রাত্তিরে সোহাগ করতে-করতে বলে - সবাই সুযোগ পায় না। তুমি পেয়েছ বাগিয়ে নাও।
পাতলা ফিনফিনে নাইটির ফাঁক দিয়ে নরম শরীরে ডুব দেবার নেশায় ভুলে যায় কমিউনিজম-এর সব তত্ত। কোথায় হারিয়ে কে জানে!
লাইসেন্সরাজের কল্যানে অনেককিছুই হারিয়েছে, বিবেকটাও যাবে ভাবে নি। বিবেকবতী অরুণিমা'র মনের পরিবর্তন তাদের সংসারে সাচ্ছন্দ-সুখ সব এনেছে। আমদানী হয়েছে রুপকের নতুন নেশা - টাকার নেশা। ফকটাই টাকার নেশা!
থার্ড-ফ্লোরের সিঁড়িতে এসে দাড়ায় রুপক। কলিং বেল-এ হাত। দরজায় বেল বাজতেই আলোর রোশনাই দেখে মনে পড়ে মেয়ের জন্মদিন। সকালেই আবদার জুড়েছিল - বাপি প্লিজ তাড়াতাড়ি রিটার্ণ কোরো।
মেয়ের মাথায় তখন হাত রাখে, কিন্তু বলা আর হয় না - কি করে আসব ক্লায়েন্ট মিট বাড়ছে যে! রাত তো হবেই।
রাত গভীর হয়, মন গভীরতা খোঁজে শরীরের খাঁজে। শরীরের হলকায় জ্বলতে-জ্বলতে মিলতে-মিলতে হারিয়ে যায় রুপকের বিবেক।
গুনগুন করতে-করতে সিঁড়ি ভাঙে রুপক। আজ মনটা বেশ খুশিই আছে। পকেটে কিছু আমদানি হয়েছে। ফকটাই!
চাকরি জীবনের শুরুতে ফকটাই শব্দটার কথা ভাবলেই পুরোনো স্মৃতি সব ভিড় করে। ধীমানদা পাশের ডেস্ক-এ বসত আর হেসে বলত রুপক একটা সময়ের পর বুঝবি সব গরুই গোয়ালের খাবার খায়। রাত্তিরের খাবারের সাথে গোবর একটু লাগবেই। গোবরটাই শুদ্ধি।
লাজুক হেসে এড়িয়ে গিয়েছে সেসময় ধীমানদার কথা। বাম রাজনীতির ফসল সে। কলেজ লাইফেই স্টুডেন্ট পলিটিক্স। তারই হাত ধরে অরুনিমার সাথে প্রেম। পরিনতি পলিটিক্স-এর দাদাদের হাত ধরে এই আবগারি দফতরে চাকরি। প্রায় উড়তে-উড়তে এসে অরুনিমার হাত ধরে বলেছিল - চাকরিটা হয়ে গেছে। এবার দুজনে সংসার!
তখনও রুপক সংসারের কেঠো-মেঠো রুপটি নজর করেনি। নজর করেনি বাপির ঘাড় নুয়ে যাওয়া সংসারের জোয়াল বইতে-বইতে।
বাপিকে প্রণাম করে বলতে শুকনো হেসে বলেছিল - আমি ভেবেছিলাম তুই ল-পাশ করে ওকালতি করবি। স্বাধীন হবি। একটু হাঁফ ছেড়ে বলে - যাক বিধাতার লিখন কে খন্ডায়।
চাকরির পর বিয়ে। বিয়ের পর ট্রান্সফার। এই জলপাইগুড়ি শহরে এসে বসা। সেখানেই ধীমানদার সাথে আলাপ। বেশ সদালাপী মানুষ ছিল। হঠাৎ অফিসে এসে বলল, " বুঝলি চাকরিটা ছেড়েই দিলাম।"
কি করবে ! কি করে চলবে ?
একলা মানুষ ঠিক চলে যাবে। এবার শুরু করব সমাজসেবা।
মানে!
পলিটিক্স। বুঝলি না। সুদিন দাদার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কাউন্সিলার হতে হবে।
তাতে তোমার কি হবে?
দেখ, আমার তো একটা প্রাণ। বিশবছর সার্ভিস হয়ে গেছে। পেনশন পাব।
কিন্তু তুমি কি ঐ খিস্তি-খেউড়েদের মাঝে থাকতে পারবে?
তোকে বলেছি না রাত্তিরের গোবরটাই শুদ্ধি। মানুষের জন্য কাজ করব এটা কি বড় কথা নয়?
মানুষের জন্য কাজ কি আজ কোনোও নেতা করে?
করে রে বাবা করে। এই তো সুদিনদা কত মানুষের জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছে দিন-রাত।
রুপকের কাছে এর জবাব নেই। তবে পাল্টা চাল চেলে বলে - দাও না তোমার সুদিনদা কে বলে আমার ট্রান্স্ফারটা করিয়ে। বাড়ি ফিরে যায়। কতদিন কলকাতায় নন্দনে যায় নি, অ্যাকাদেমিতে থিয়েটার দেখিনি ...
সুদিনদা দেখেছিল, ধীমানদাদা কেও দেখেছিল। সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি।
আজ প্রায় বছর পনেরো বাদে ধীমানদাদা কাউন্সিলার পদ ছাপিয়ে অনেক পথ এসেছেন। রাজ্যের রাজপাট-এর বদল হয়েছে। বাম-ডান সব বদলে ডান-বাম মিলমিশ খেয়ে গেছে। এখন ধীমানদাদা মন্ত্রী!
রুপক তার বিভাগ বদল করে ধীমানদাদার আপ্ত-সহায়ক! কোথায় লেনিন-মার্কস বিলাপ করে তার ঠিক নেই তবে রুপকের কমিউনিজ্ম কাপড় পাল্টে কনজিমারিজ্ম-এর তত্তে বদলেছে। সময় রুপককে শিখিয়েছে ডান-বাম মিলেমিশে সবই ভাম!
অরুণিমা এখন শাড়ি ছেড়ে জিন্স-এ না এলেও রঙ-বেরঙা চকচকে রুপসজ্জার ভান্ডারে উপস্থিত হয় মেয়েকে সাথে নিয়ে। ছেলের বায়নাক্কার শেষ নেই। মোটরবাইক কোম্পানির ঝকঝকে বিজ্ঞাপনের দৌলতে রুপকের পকেটের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে এক-কামরার ফ্ল্যাট, সেখান থেকে এখন তিন-কামরা!
সরকারি ভান্ডারের থেকে তিন-কামরার ফ্ল্যাট ভাবাটাই অন্যায় হলেও ধীমানদাদার কল্যানে সবই সম্ভব হচ্ছে।
প্রাণ হাঁসফাঁস করত শুরুতে এইসবের মাঝে। রাত্তিরের ঘুম উড়ুউড়ু প্রায়। অরুণিমা বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে রাত্তিরে সোহাগ করতে-করতে বলে - সবাই সুযোগ পায় না। তুমি পেয়েছ বাগিয়ে নাও।
পাতলা ফিনফিনে নাইটির ফাঁক দিয়ে নরম শরীরে ডুব দেবার নেশায় ভুলে যায় কমিউনিজম-এর সব তত্ত। কোথায় হারিয়ে কে জানে!
লাইসেন্সরাজের কল্যানে অনেককিছুই হারিয়েছে, বিবেকটাও যাবে ভাবে নি। বিবেকবতী অরুণিমা'র মনের পরিবর্তন তাদের সংসারে সাচ্ছন্দ-সুখ সব এনেছে। আমদানী হয়েছে রুপকের নতুন নেশা - টাকার নেশা। ফকটাই টাকার নেশা!
থার্ড-ফ্লোরের সিঁড়িতে এসে দাড়ায় রুপক। কলিং বেল-এ হাত। দরজায় বেল বাজতেই আলোর রোশনাই দেখে মনে পড়ে মেয়ের জন্মদিন। সকালেই আবদার জুড়েছিল - বাপি প্লিজ তাড়াতাড়ি রিটার্ণ কোরো।
মেয়ের মাথায় তখন হাত রাখে, কিন্তু বলা আর হয় না - কি করে আসব ক্লায়েন্ট মিট বাড়ছে যে! রাত তো হবেই।
রাত গভীর হয়, মন গভীরতা খোঁজে শরীরের খাঁজে। শরীরের হলকায় জ্বলতে-জ্বলতে মিলতে-মিলতে হারিয়ে যায় রুপকের বিবেক।
Comments