সাথে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি !

ব্যালকনির লাল পাতাবাহারের রুপটা রাত্তিরে বদলে যায় অলীক দেখেছে।  যেন কথা বলে।  এখন প্রায়ই রাত্তিরের রুপটা দেখার-বোঝার চেষ্টা করে।  নানান ছেলেবেলার কথা ভেসে আসে মনে, প্রাণে।  মন ও প্রাণ এই দুই শব্দের তফাৎ বুঝতেই অনেক বসন্ত গড়িয়ে গেছে তার।  সত্যিই ভারী বোকা ছিল সে - ব্রেণ ও হার্ট এই দুইই যে উৎপত্তিস্থল তা বুঝতে এতটা সময়!!
আজও সে দাড়িয়েছে বৃষ্টিভরা রাতে।  এখানে বৃষ্টি টুপটাপ পড়ে না, সবই ঝমঝমিয়ে-হনহনিয়ে।  মাসদুয়েকের রোদের হলকা পেরিয়ে আজ পাতাবাহার খুব খুশি বৃষ্টির জলের স্পর্ষে।  অলীকের এই পাতাবাহার কেনার কথাটা মনে পড়ে।  একলায় বেরিয়েছিল পায়চারি করতে রাস্তায়, রাত্তিরের রাস্তায়।  এখানে রাত্তির সহজে ঘুমোয় না।  প্রায় এগারোটার সময় পথের ধারের নার্সারির থেকে তুলে আনা।  বেশ উত্তেজিত হয়েই ফিরেছিল ঘরে।  সেই থেকে পাতাবাহারটা রয়ে গেছে ঘরে।  পরের রবিবার অলীক ও ছেলে দুজনে মিলে বেশ যত্নে রেখেছিল গ্রিল-এর ওপর।  ছেলে জল দেয় সময় পেলে, কখনওবা অলীক।
ছেলে অনেকবার প্রশ্ন করেছে - হঠাৎ রাত্তিরে কেন কিনলে এই লাল ক্রোটোন। 
অলীক উত্তর দেয় - ক্রোটোন নয় পাতাবাহার।  মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার বাগান করা, বন্ধুরা মিলে।  শালের জঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট শহরে থাকত তারা।  ফ্ল্যাট-এর পিছনের পড়ে থাকা জায়গায় বাগান।  গাছ কে দেবে? 
সহজ উত্তর ছিল এক বন্ধুর, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে নিয়ে আসব।
ওরা দেবে কেন? 
সহজ উত্তর বন্ধুর - দেবে না। আমরা নিয়ে আসব।
সেই শুরু - কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে ফুলের টব, পাতাবাহারের টব চুরির আনন্দ মুখে বলা যায় না।  অলীকের পছন্দ ছিল পাতাবাহার।  রঙ-বেরঙ-এর পাতাবাহার।  দিনের আলোয় দেখে আসা ও রাত্তিরের অন্ধকারে নিজের করে নেওয়া। এমনকি বড়রা জানলেও প্রতিবাদ আসে নি।  কে জানে হয়তবা ভাল কাজে চুরিও ভাল হয়ে যায়।  রাত্তিরের নার্সারি পেরোনোর সময় পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে অলীকের এখন তো আর চুরি করতে পারে না তাই কেনা।
আজ সময়-সময় পুরোনো স্মৃতি ঘিরে ধরে।  ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই পুরোনো শহরে। পা রাখতে মন চায় সেই পুরোনো বাসায়।  একবার সে গিয়েওছিল পুরোনো কোয়াটার্সে।  মেলে নি সেই পুরোনো ছোঁয়া পুরোনো গন্ধ পুরোনো রঙ। একবার হারালে আর মেলেনা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাতাবাহারের দিকে নজর দেয় অলীক, পাতাগুলো জল পেয়ে চকচক করছে।  পাশের ফ্ল্যাটের থেকে উপচে পড়া আলোয় পাতার ঘুম ভাঙে কিনা অলীক ভেবে দেখেনি কখনও।  বৃষ্টির বেগ বাড়ছে, সমুদ্রের পাশের জায়গা তাই বাতাসের বেগও সেইরকম।  সোঁ সোঁ শব্দ উস্কে দেয় সেই কোন ছেলেবেলার আরোও কিছু স্মৃতি - কালবৈশাখীর বিকেল।  খেলার মাঠে জলে-কাদায় মাখামাখি হয়ে ফুটবল খেলা। খেলার আনন্দের চেয়ে জলে ভিজে কাদায় মাখামাখি হওয়ার আনন্দই বেশি।
ডানার ঝাপটানিতে নিস্তব্ধতা ভাঙে।  গ্রিলের ভিতরে এক লক্ষীপ্যাঁচা অলীকের দিকে জুলজুল করে চেয়ে।  ব্যালকনিতে এখন তিনটি প্রাণ - অলীক, লক্ষীপ্যাঁচা, লাল পাতাবাহার।
সাথে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি ! 

     
  

Comments

Popular Posts