বিমলদা.... রা
ছেলের কান্নায় পেয়েছে কদিন ধরে! হঠাৎই স্কুলে যাওয়া পছন্দ করছে না। অনীকের হয়েছে যত মুস্কিল! কি যে করে! একা মানুষ, স্কুল-ডে-কেয়ার করেই ম্যানেজ করতে হয়। চাকরি তো ছাড়তে পারবে না। তাহলে খাবে কি? যদিও সে ভালই ম্যানেজ করে। স্কুলে সকলেই ভাল, বেশ ভাল। মা-হারা ছেলেকে রাখা একটু ঝক্কিরই ব্যাপার। কিইবা করা। সকলের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের ওপরই বাচ্চার ও তার বাপের ভরসা। বাচ্চা তো আর জানে না পুরো ব্যাপারটা কি?
অগত্যা…..
এইতো সেদিন স্কুল থেকে ফেরৎ আনার সময় দাড়িয়ে থাকা সিকিউরিটি গার্ড-এর সাথে কথা বলছিল অনীক। বহুদিনের এই শহরবাসী। অনেক শহর ঘুরে এখানে মন বসেছে। পেয়েছে মনের মানুষও! বলল, স্যার এর মত জায়গা নেই। অনীক চুপচাপ শ্রোতা। এই ভূমিকায় অভিনয় করাই ভাল। হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলানোই এক আনন্দ আছে তা সে অনুভব করে। কথার পিঠে কথা এসে পড়ে.. বাচ্চার গালে-মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে বসে, মাম্মা কিধার?
অনীক ইশারাই বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আবার প্রশ্ন করে, মাম্মা কিধার?
ছেলে তখন খেলায় মত্ত। অনীকের কপাল ভাল! শেষমেষ নিজেই উত্তর দেয়..
চুপ……. মিনিট খানেকের বিরতির পর অনীক বিদেয় নেয়। এখন দেখেছে অনীককেই সান্তনা দিতে হয়।
পরদিন আবার স্কুল থেকে ফেরার সময় গার্ড-এর সাথে দেখা। আজ ছেলেকে দেখেই দুটো এক্লেয়ার্স বার করে পকেট থেকে। মা-হারা ছেলের প্রতি একটু ভালবাসা, ভেতর থেকে। কেউ বলেনি, কেউ জোর করেনি। নিজের জন্য নিজের করা…… তাতেই আনন্দ। হৃদয় নামক ভারী শব্দটাকে নাহয় বাদই রাখলাম।
ছেলে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চকোলেট দুটো হাসিল করে। সে তো চকলেট পেয়েই খুশি। জাহাজের খবরে তার কি কাজ!
গাড়ি ঘোরানোর সময় হাত নেড়ে বাই বলে সে। সেই দিনই শেষ কান্না! আর কাঁদেনি।
অনীকের মনে পড়ে বহুদিনের পুরোনো কথা। বিমলদা। গাড়ির ড্রাইভার। স্কুলের গাড়ির। তখন সে প্রাইমারি লেভেল-এ পড়ে। কি যে সম্পর্ক ছিল তার সাথে জানেনা। আর কাউকে পাশে না বসিয়ে অনীককেই পাশে বসাত সবসময়। অনীক রাস্তার গাড়ি দেখে প্রশ্ন করত না জ্বালাতন করত এখন বুঝতে পারে না। শুধু এটুকু মনে পড়ে গাড়ি থেকে নামার সময় তার বরাদ্দ চকোলেটের ভাগ সে কাউকে দেয় নি। এমনকি দিদিকেও নয়!
বহুদিন আগে ঐ শহর ছেড়েছে অনীক। বিমলদা এখন কোথায় তাও জানে না। কিইবা তার অবস্থা জানা নেই। শুধু মনে আছে চকোলেট পর্ব। প্রাণটা ভীষণ কেঁদে ওঠে। ছেলেও হয়ত একদিন ভাববে এই গার্ড-এর কথা। বিমলদারা তো সবসময় আছে…. স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে!
Comments