ফ্রি নয় ফ্রিডম !!!

কি লিখব এটাই সময়-সময় বড় ব্যাপার হয়ে দাড়ায়....

সকাল থেকেই সোম বসেছে কিছু লিখবে বলে।  সোমের আজ সত্যিই সোমবার, অর্থাৎ সপ্তাহ শুরুর দিন।  এই দেশে সবই শুক্রবার রবিবার।  মরুশহরের দেশ। লোকবল বাইরে থেকে এনে বড় হওয়া দেশ।  সবে শিক্ষার প্রসার ঘটছে।  শিক্ষা মানুষকে বাঁচতে ও বাঁচাতে শেখায়... একথা সোম বেশ লেট করেই বোঝে।  ক্রমাগত সে তাত্তিক হচ্ছে কিনা বোঝেনা।  তবে এটুকু উপলব্ধি হয় যে দেশের বাইরে থাকলে দেশের হালচাল নিয়ে নাড়াচাড়া বেশি দেয় মনে।  এই যেমন নেট নিউট্রালিটি, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এই শব্দগুচ্ছ বেশ টানছে একথা সোম বোঝে।  সেকালের মানুষের সমস্যা একালে কি হয় সেকথা কেউই বোঝার চেষ্টা করে না।  গত সপ্তাহখানেক সোম এই শব্দগুচ্ছগুলো বোঝার চেষ্টা করেছে।  বেশ খটমটই বোধ হয় পঞ্চাশ পার করে এই ডিজিটাল ওর্য়াল্ড।  কেউ যেন সমাজের পাইপলাইনটাই বদলাতে ব্যাস্ত।  বলছে সরল হচ্ছে জটিল!!

জটিল থেকে জটিলতর জীবনযাপনের অভ্যাস একটা সময়ের পর মানুষের ভাল লাগে না।  বদল ভাল যদি তা ইন্সপায়ার করতে পারে সমাজকে, থুড়ি বলা ভাল সমাজের মানুষকে।  নতুন অনেক শব্দের আমদানি হয়েছে সোমের জীবনে - এই যেমন হোয়াট্স-অ্যাপ, টুইটার, ভাইভার, উইচ্যাট, অনলাইন-অফলাইন, স্কাইপ।  নিত্যনতুন শব্দ ও তারই সাথে একগুচ্ছ টেকনোলজিবেস্ড অ্যাপ ফ্রি!!!  সোমের বহু পুরোনো একটা ঘটনা মনে পড়ে যায় - নিজেই নিজের মনে হাসে।

চৈত্রের সেল লেগেছে।  চারপাশে লোকে-লোকারণ্য।  হরেকরকম সেলের ঠেলায় রাস্তায় চলায় মুস্কিল হয়ে ওঠে।  হঠাৎ নজরে পড়ে এক পোস্টার - ফ্রি কা টোপি দিখতা নেহি।  

সোম বেশ উৎসাহ নিয়েই বুড়োর সাথে আলাপ জোড়ে।  একথা-সেকথার পর বুড়ো এক আজব কথা বলে - বেটা ফ্রি মে মা-বাপ ভি নেহি মিলতা!!  বেটা আপনে দশ মাহিনা দশ দিন অন্দর মে তকলিফ্ ঝেলনে কে বাদ হি ধরতী নে আপকো বাহার আনে দিয়া।  উসিকে বাদ হি আপকো এক মা-বাপ মিলতা।  সাচ্ হ্যায় কি নেহি!! 


সোম পরে নানান সময় একথা নানান প্রেক্ষিতে ভেবেছে - ফ্রি মে মা-বাপ ভি নেহি মিলতা!! 


যাইহোক ফিরে আসা যাক কাজের কথায় - দেশ তৈরি হয় মানুষকে নিয়ে না মানুষ তৈরি হয় দেশ নিয়ে এটাই বড় প্রশ্ন।  ইন্টারনেট-এর সঠিক বাংলা আন্তরজাল।  সত্যিই আন্তরজাল, যার সাফল্য নির্ভর করে সঠিক ও নির্ভুল খাদ্যের সঞ্চালনে।  এখানে তথ্যই খাদ্য।  দেশই দেহ।  একথেকে বহু বা বহু থেকে এক।  সেখানে মানুষের অবস্থান কোথায় আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  দেশের পুষ্টি নির্ভর করে দেশের মানুষের শিক্ষার ওপর।  তা দেশের সামগ্রিক চেতনার রুপটিকে বদলে দেয়।  সেই বদল কোনোও বিপ্লবের মাধ্যমে নয় মিউটেশানের মাধ্যমে সম্ভব।  এই মিউটেশানেই সাহায্যকারী ক্যারিয়ারই আন্তরজাল।  সেই তথ্যের ওপর খবরদারি নিঃসন্দেহে অমানবিক শুধু নয় দেহের বিকাশ তথা দেশের বিকাশের তথা বিশ্বের বিকাশের পরিপন্থী।  এযেন ছোট্ট বাচ্চার ওপর প্যারেন্টাল কন্ট্রোল!!

সহজ সরল জীবনযাপনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল লাগে না, প্রয়োজন হয় সচেতনতার।  কনজিউমারিজিমের ফাঁদ থেকে বাঁচার শক্তি মানুষের নেই।  সেই ছোট্ট বেলা থেকে সোম দেখে আসছে ট্রেণে-বাসে লজেন্সওলা-খেলনাওলা বাচ্চাদের সামনেই বেশি করে আসে।  বাচ্চা শুরুতে চকোলেট, একটু বড় হলে চকোলেট, আরোও একটু বড় হলে চকোলেট!!!  শুধু বয়স বাড়লে চকোলেট-এর মোড়ক ও ভেতরের উপাদানের বদল হয়।  সোম এখনও স্মার্ট ফোনের সঠিক ব্যাবহার করে উঠতে পারে নি তো সে কিকরে টুইট করে টাকা ট্রান্সফার করে!! অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশান মানে অগুন্তি পাসওয়ার্ড ও তাকে ধরে রাখার যন্ত্রণা।  শুধু তাই নয় সব কিছুই আন্তরজালে পড়ে থাকল।  এর ভাল কি জানা নেই।  কোথাও পড়ে ছিল ট্যানজিবল টু ইনট্যানজিবল!! সত্যিই ভার্চুয়্যাল ওর্য়াল্ড-এর বাড়বাড়ন্ত দেখে সোম বোধ করে ফিজিক্যাল অ্যপ্রোচ বদলে অদেখা-অজানা-অধরা ওর্য়াল্ড-এর পথে আমরা পা বাড়ালাম।  এ যেন দৈত্ব থেকে অদৈত্বের পথে পা রাখা।  

মোবাইল ডেটার ফাঁদ দেশকে এগিয়ে শুধু নয় পিছিয়েও দেবে।  আমরা মানুষ অনেক কিছুই ভুলে যাব।  তার প্রথম ধাপ সোম বোঝে তাকে নিজেকে দেখে।  একসময় সে মনে রাখত প্রায় গোটা পঞ্চাশেক ল্যান্ডফোন নাম্বার।  এখন সব ধরা আছে ব্যাক-আপ অ্যাপ্লিকেশানে।  এখন সে ভাবে ভবিষ্যতটা তাহলে সঠিক কি?

ডেটা!!! আন্তরজালের ডেটা! অ্যাপ্লিকে শান।  অ্যাপ্লিকেশান।  অ্যাপ্লিকেশান।  

মানুষ জন্মানোর আগেই তার ডেটা তৈরি হয়ে যাবে।  জন্মের সময় হতে তার ব্রেণ-এ ডেটা ফিড করা হয়ে যাবে।  তার শৈশব হারিয়ে যাবে ডেটার ফাঁদে।  জন্মেই বড় হবার যন্ত্রণা ভোগ করবে আগামী প্রজন্ম।  এই ডিজিটাল ওয়ার্লড-এর ফাঁদে ফেলে দেশের মানুষকে ফ্রি তে কিছুই দেওয়া যাবে না এই সারটা কর্তা-ব্যাক্তিরা কবে বুঝবেন।  ডিজিটাল ওর্য়াল্ড-এর ফাঁদে পড়ে বগা বহু আগে থেকেই কান্দে।  সব বগাই জানে ফ্রি নয় ফ্রিডম চাই।  তবুও..। এই সহজ সত্যটা বোঝার জন্য দিগ্বজ হবার দরকার নেই।  

তাই সময়-সময় মনে হয়ে ব্যাবসায়ীরা ব্যাবসায়ী নয় কর্তা-ব্যাক্তিরা ব্যাবসায়ী হয়ে উঠেছেন।   

Comments

Popular Posts