হরি হে .....
সেই কোন ছেলেবেলায় সু মাকে হারিয়েছে। মা না থাকার যন্ত্রণা শেয়ার করার মত কাউকে সে পাই নি জীবনে বা অন্যভাবে বললে সে শেয়ার করতেও চায় নি। সকলে মাকে জড়িয়ে যখন কোলে চাপার বায়না ধরেছে সু সরল মনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বা'র কোলে। বা'র কাছে ছিল সু'র যত আবদার। তার আবদারের ঠেলায় বা অস্থির হলেও মুখে প্রকাশ হতো না। সু তো বহুদিন জানতোই না মাকে আর পাওয়া যাবে না। সে খুশি ছিল এই ভেবে এখন কিছুদিন বা'র কাছে থাকছে পরে মামান এসে যাবে। ধীরে ধীরে বড় হয়েছে স্কুলে গেছে। শুরুতে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝেছে। বা'র কাছে সে কখনও প্রশ্ন করে নি কি হয়েছিল? করে কি হবে? প্রথম জানতে পারে তার মামান-এর কথা ভাল্লিকার কাছ থেকে। সে মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিল - তোর তো মা নেই তুই বুঝবি না। ভ্যানে বসে স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রথম শোনা তোর তো মা নেই!
বাড়িতে ফিরে ব্যাগটা কোনোওমতে ছুঁড়ে ফ্যালে সে। বড়ি আম্মা খানিক অবাক হয়ে চেয়েছিল শুধু। আর কপাল দেখ বাপির ফোন এল সেই সময়। খানিক রাগ করেই সু বলে - তুমি এক্ষুনি এস।
- কেন মাম্মাম? কি হলো?
- বলছি তুমি এস।
- আচ্ছা আসছি।
বা এসেছিল ফিরে অফিস থেকে খানিক বাদে। সময় বা কোনোওদিনই নেয় না। তারপর দুজনে মিলে বেরোয় ঘুরতে। বা'র সাথে ঘোরা মানেই মুভি-আইসক্রিম-পপকর্ণ।
সেই বা-ই আজ জোর করে তুলে নিয়ে এল মুভি থেকে। বেশ ভালই এনজয় করছিল রনির সাথে। এখন তারা বড় হয়েছে বিয়ে হয়েছে। বা সাথে না থাকলেও শহরের কাছাকাছিই থাকে। শুরুতে বা একলা থাকলেও সকলে মিলে জোর করেই জুড়ে দিয়েছিল শিবেদাকে। শিবেদা হলো বড়ি আম্মার ছেলে। সু-এর চেয়ে অনেক বড় প্রায় বা'র বয়সি। সেই শিবেদা'র ফোন এল - দিদিভাই তাড়াতাড়ি এস।
- কোথায়? কেন? কি হয়েছে? এই ছিল সু-এর স্বাভাবিক প্রশ্ন।
- তুমি এস না দিদিভাই। বা কেমন করছে।
আর মিনিট খানেক নষ্ট করে নি সু। রনিকে প্রায় জোর করেই সিট থেকে তোলে কিছু না বলে, প্রায় মিনিট পয়তাল্লিশেকের পথ বা'র বাংলো। হুড়পাড়িয়ে ঢোকে সু। এই দীর্ঘ পথ সে একটাও কথা বলে নি। অথচ বা ড্রয়িং রুমে ঠাই বসে। মুখে একফোঁটাও বিকার নেই। শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে বারিধারা বয়ে চলেছে। কোনোও কথা নেই।
- দিদিমনি দুপুরে বা একবার বাইরে বেরিয়েছিল, ফিরে এসেই এই চলেছে। কোনোও উত্তর নেই। আমি ভয় পেয়েই তোমায় খপর দিই।
সু নিরুত্তর থেকে রনির দিকে তাকায়। রনির মুখ থমথমে। ইশারায় এগোতে বলে। সু মাথায় হাত রাখতেই বা চিৎকার করে ওঠে.. সরে যাও। সবাই সরে যাও।
ডক্টর আঙ্কলকে ডেকেছে সু। বা'র নিয়মিত ফিজিসিয়ান কাম বন্ধু। বা'র বন্ধুর সংখ্যা হাতে গোনা তার মধ্যে ইনি একজন। এসেই প্রশ্ন - কি হয়েছে রে সু? আমি তো কালই কথা বলেছি ফোনে। সবইতো ঠিক ছিল। তবে তোর বা যা ইমোশনাল ঘটনা ঘটতে দেরি হয় না।
সু দীর্ঘশ্বাস নেয়, এই সময় দীর্ঘশ্বাস টেনশান রিলিজ করতে বেশ সাহায্য করে। সু'র মনে পড়ে যায় অনেক পুরোনো কথা, পুরোনো সব ইমোশান। বা সত্যিই ইমোশানাল নইলে আজকেও মামানকে সমানভাবে ভালবাসা যায় না। সু'র তো মামানের মুখটাই মনে পড়ে না অথচ মামানের সাথেই তার জীবনে অবিচ্ছেদ্দ তিন-তিনটে বছর কেটেছে। তারপর বেশ কিছুদিন মনে পড়লেও সময়ের সাথে হারিয়েছে সেই দৃশ্যাবলী। সেই থেকেই শুধুই বা। সকলে বলত বা ন্যাওটা। সু জিভ ভাংচি দিয়ে বলতো - তোর কি!
ভোরবেলা সু ঘুমতে গেছে। সারাটা রাত্তির জাগা। রনির অবশ্য ওসব নেই সে তো ঘুমেই কাদা। সকালে অফিসেও যেতে হবে ওকে। সু না হয় নিজের স্টুডিও। ডক্টর আঙ্কল কাল রাত্তিরে অল্প ডোজের ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল। যাবার আগে সতর্ক করেছিল তাকে- বা'কে এখন আর কোনোওরকম স্ট্রেস এর মধ্যে দিয় না যেতে হয়। বয়স হচ্ছে। ইমোশানাল ব্যালান্স নষ্ট হচ্ছে খুব দ্রুত। এমনিতেই বা কল্পনা প্রবন।
- দিদিমনি.. ও দিদিমনি। ছোট্দিমনি। ওঠো.. বা ডাকছে।
ধড়পড়িয়ে ওঠে সু। এক ছুটে যায় ওঘরে বা'র কাছে। অবাক কান্ড - এখন বা একদম নর্মাল।
- তোমার কাল রাতের কথা কিছু মনে আছে?
- না তো। কেন কি হয়েছিল? শিবেটা আজকাল যা বলে কিছুই মাথায় ঢোকে না। প্রথমে বলে আমি কাঁদছিলাম। তারপর বল্লে ডক্টর এসেছিল, ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল।
সু জবাব দেয় - শিবেদা ঠিকই বলেছে। কাল আমি এসে দেখলাম তুমি শুধুই কাঁদছ। আমি কাছে ঘেঁষ্তেই চিৎকার করে উঠলে সরে যাও সবাই। সে যাই হোক এখন কেমন আছ বল তো ?
আমি ঠিক আছি। তুই একবার ডক্টরকে ডেকে দে। আমি কথা বলব।
- কি কথা বলবে ?
- আহা। তুই ডাকই না। যা বলার তোর সামনেই বলব। ওহ আরেকটা কথা তুই রনিকেও ডেকে নিস। ওরও থাকা দরকার।
ডক্টর আঙ্কল এসেছেন বিকেলে, রনিও হাজির। রনিকে সু আগে থেকেই বলে রেখেছিল। অবশ্য রনির এই সুবিধেটা আছে যে সে যখন খুশি বেরিয়ে আসতে পারে। ক্রিয়েটিভ লোকেদের এই সুবিধে, আবার অসুবিধেও আছে টাইমের ঠিক নেই। প্রয়োজন পড়লে সারাটা রাত্তির শুধু নয় তিন-চার রাত্তিরও হতে পারে। প্রথমে সু'র অসুবিধে হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছে। সে সময় সু ব্যাস্ত থাকে বা'কে নিয়ে।
সকলে বসলে শুরু হয় কথা - বা'কে একটু নার্ভাসও লাগছে। রনি যথারীতি চুপ। সু'র টেনশান। ডক্টর আঙ্কল সেন্টার টেবিলে পা তুলে দিয়েছেন, হাতে কফির কাপ।
বা শুরু করেন ধীরে ধীরে। তোমরা সকলেই টিভিতে গতকয়েকদিনের নিউজ দেখছ। আমিও চোখ রাখছি। কিন্তু একটা কথা তোমাদের বলি ঘটনার ঠিক আগের দিনের ভোরে আমি প্রায় জেগে থাকা অবস্থায় এই স্বপ্ন দেখেছি। অবিকল সেই অত্যাচার। মুখগুলোও খুব ঝাপসা অস্পষ্ট। ঠিক বুঝতে পারছি না যোগসূত্রটা কোথায়। খানিক বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করতে যান বা।
ডক্টর আঙ্কল কিছু বলতে গেলে ইশারায় চুপ করিয়ে দেন।
ডক্টর তুমি বলবে এসবই মেটাফিজিক্স - সিউডোসায়েন্স, কিন্তু তুমিই বল স্বপ্নে দেখা ঘটনার রেপ্লিকেশান কি করে হয়? শুধু তাই নয় এরপর যদি বলি আমি আরোও কিছু দেখেছি।
- কি ? ডক্টর আঙ্কল বেশ জোর দিয়েই বলেন।
- তুমি কাঁদছিলে কেন ? সু একটু জোর দিয়েই বলে। স্বপ্নের সাথে তোমার কান্নার সম্পর্ক কি?
রনির সাথে চোখাচোখি হয় সু-এর। রনি এই টোন পছন্দ করছে না। ওর বা'র প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা।
বা খানিক চুপ থেকে মাথা নিচু করে। সোফায় আঙুল চালাতে চালাতে সু'র দিকে তাকায়। আবার চুপ।
সু খানিক বিরক্ত হয়েই বলে - তোমার স্বপ্নের সাথে কান্নার কারন কিভাবে জড়িয়ে আছে?
ওরে টুবুন স্বপ্নটাই তো তাই... আমি কাঁদছি..... শুধুই কাঁদছি। কোনোও কারন নেই। আর দ্যাখ ঘটনাটা তো তাই হলো, আমি কেঁদেছি কোনোও কারন ছাড়াই।
অন্যসময় টুবুন ডাক শুনলে সু রেগে যায় আজ কিছু বলল না। মাথায় ঘুরছে সেই পোকাটা তাহলে কি তার মধ্যেও রয়েছে একই ক্ষমতা...
সেও তো দেখেছে বাপির কান্না কয়েকদিন আগে। শুধু বা'র চেহারাটাই যা আবছায়ার মাঝে ঘেরা ছিল। এক বুড়ো শুধুই কেঁদে চলেছে, বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে ক্রমাগত একটা জালের ভেতর থেকে পারছে না। হঠাৎ দূর থেকে আলোর কনারা বাড়ে সংখ্যায় তীব্রতায় গভীরতায়, ঘিরে ফ্যালে পুরো লোহার জাল। চিৎকার শুনতে না পেলেও বুজতে পারে বা'র সারাটা শরীর জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছে। হাজার বাতির বজ্রপাতের শব্দের ফেরে চৈতন্য হয় সু'র।
সেদিন আর দাড়ায় নি ওখানে। বা'কে কিছু বলেও নি। সকলে চলে গেলেও সু বা'র ঘরের বাইরে পা রাখেনি আর।
দুদিন পর বা'র মুখাগ্নির সময় সু চুপ করে ছিল। আগুনের সামনে শিরশিরে বাতাসের মাঝে দাড়িয়ে মনে পড়ছিল সেই কোন ছেলেবেলার কথা, কিশোরী বয়সের কথা, যুবতী বয়সের বন্ধুতা। আজ বা নেই, শুধু বন্ধুতার অবয়ব রয়ে গেছে। এই অবয়ব দেখেও দেখা যায় না। সব শেষ হলে শিরিশিরে বাতাসে স্নান করে স্টোলটা ভাল করে জড়িয়ে টেনে হাত দুটোকে গুটিয়ে ধরে নিজেকে, মনে-প্রাণে আঁকড়ে ধরে খুঁজতে চায় বা'কে। বাইরের আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলছে বাইরে ভেতরে সর্বত্র! এখন সু বোঝে আগুন শব্দের মর্মার্থটা সঠিক কি।
বাড়িতে ফিরে ব্যাগটা কোনোওমতে ছুঁড়ে ফ্যালে সে। বড়ি আম্মা খানিক অবাক হয়ে চেয়েছিল শুধু। আর কপাল দেখ বাপির ফোন এল সেই সময়। খানিক রাগ করেই সু বলে - তুমি এক্ষুনি এস।
- কেন মাম্মাম? কি হলো?
- বলছি তুমি এস।
- আচ্ছা আসছি।
বা এসেছিল ফিরে অফিস থেকে খানিক বাদে। সময় বা কোনোওদিনই নেয় না। তারপর দুজনে মিলে বেরোয় ঘুরতে। বা'র সাথে ঘোরা মানেই মুভি-আইসক্রিম-পপকর্ণ।
সেই বা-ই আজ জোর করে তুলে নিয়ে এল মুভি থেকে। বেশ ভালই এনজয় করছিল রনির সাথে। এখন তারা বড় হয়েছে বিয়ে হয়েছে। বা সাথে না থাকলেও শহরের কাছাকাছিই থাকে। শুরুতে বা একলা থাকলেও সকলে মিলে জোর করেই জুড়ে দিয়েছিল শিবেদাকে। শিবেদা হলো বড়ি আম্মার ছেলে। সু-এর চেয়ে অনেক বড় প্রায় বা'র বয়সি। সেই শিবেদা'র ফোন এল - দিদিভাই তাড়াতাড়ি এস।
- কোথায়? কেন? কি হয়েছে? এই ছিল সু-এর স্বাভাবিক প্রশ্ন।
- তুমি এস না দিদিভাই। বা কেমন করছে।
আর মিনিট খানেক নষ্ট করে নি সু। রনিকে প্রায় জোর করেই সিট থেকে তোলে কিছু না বলে, প্রায় মিনিট পয়তাল্লিশেকের পথ বা'র বাংলো। হুড়পাড়িয়ে ঢোকে সু। এই দীর্ঘ পথ সে একটাও কথা বলে নি। অথচ বা ড্রয়িং রুমে ঠাই বসে। মুখে একফোঁটাও বিকার নেই। শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে বারিধারা বয়ে চলেছে। কোনোও কথা নেই।
- দিদিমনি দুপুরে বা একবার বাইরে বেরিয়েছিল, ফিরে এসেই এই চলেছে। কোনোও উত্তর নেই। আমি ভয় পেয়েই তোমায় খপর দিই।
সু নিরুত্তর থেকে রনির দিকে তাকায়। রনির মুখ থমথমে। ইশারায় এগোতে বলে। সু মাথায় হাত রাখতেই বা চিৎকার করে ওঠে.. সরে যাও। সবাই সরে যাও।
ডক্টর আঙ্কলকে ডেকেছে সু। বা'র নিয়মিত ফিজিসিয়ান কাম বন্ধু। বা'র বন্ধুর সংখ্যা হাতে গোনা তার মধ্যে ইনি একজন। এসেই প্রশ্ন - কি হয়েছে রে সু? আমি তো কালই কথা বলেছি ফোনে। সবইতো ঠিক ছিল। তবে তোর বা যা ইমোশনাল ঘটনা ঘটতে দেরি হয় না।
সু দীর্ঘশ্বাস নেয়, এই সময় দীর্ঘশ্বাস টেনশান রিলিজ করতে বেশ সাহায্য করে। সু'র মনে পড়ে যায় অনেক পুরোনো কথা, পুরোনো সব ইমোশান। বা সত্যিই ইমোশানাল নইলে আজকেও মামানকে সমানভাবে ভালবাসা যায় না। সু'র তো মামানের মুখটাই মনে পড়ে না অথচ মামানের সাথেই তার জীবনে অবিচ্ছেদ্দ তিন-তিনটে বছর কেটেছে। তারপর বেশ কিছুদিন মনে পড়লেও সময়ের সাথে হারিয়েছে সেই দৃশ্যাবলী। সেই থেকেই শুধুই বা। সকলে বলত বা ন্যাওটা। সু জিভ ভাংচি দিয়ে বলতো - তোর কি!
ভোরবেলা সু ঘুমতে গেছে। সারাটা রাত্তির জাগা। রনির অবশ্য ওসব নেই সে তো ঘুমেই কাদা। সকালে অফিসেও যেতে হবে ওকে। সু না হয় নিজের স্টুডিও। ডক্টর আঙ্কল কাল রাত্তিরে অল্প ডোজের ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল। যাবার আগে সতর্ক করেছিল তাকে- বা'কে এখন আর কোনোওরকম স্ট্রেস এর মধ্যে দিয় না যেতে হয়। বয়স হচ্ছে। ইমোশানাল ব্যালান্স নষ্ট হচ্ছে খুব দ্রুত। এমনিতেই বা কল্পনা প্রবন।
- দিদিমনি.. ও দিদিমনি। ছোট্দিমনি। ওঠো.. বা ডাকছে।
ধড়পড়িয়ে ওঠে সু। এক ছুটে যায় ওঘরে বা'র কাছে। অবাক কান্ড - এখন বা একদম নর্মাল।
- তোমার কাল রাতের কথা কিছু মনে আছে?
- না তো। কেন কি হয়েছিল? শিবেটা আজকাল যা বলে কিছুই মাথায় ঢোকে না। প্রথমে বলে আমি কাঁদছিলাম। তারপর বল্লে ডক্টর এসেছিল, ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল।
সু জবাব দেয় - শিবেদা ঠিকই বলেছে। কাল আমি এসে দেখলাম তুমি শুধুই কাঁদছ। আমি কাছে ঘেঁষ্তেই চিৎকার করে উঠলে সরে যাও সবাই। সে যাই হোক এখন কেমন আছ বল তো ?
আমি ঠিক আছি। তুই একবার ডক্টরকে ডেকে দে। আমি কথা বলব।
- কি কথা বলবে ?
- আহা। তুই ডাকই না। যা বলার তোর সামনেই বলব। ওহ আরেকটা কথা তুই রনিকেও ডেকে নিস। ওরও থাকা দরকার।
ডক্টর আঙ্কল এসেছেন বিকেলে, রনিও হাজির। রনিকে সু আগে থেকেই বলে রেখেছিল। অবশ্য রনির এই সুবিধেটা আছে যে সে যখন খুশি বেরিয়ে আসতে পারে। ক্রিয়েটিভ লোকেদের এই সুবিধে, আবার অসুবিধেও আছে টাইমের ঠিক নেই। প্রয়োজন পড়লে সারাটা রাত্তির শুধু নয় তিন-চার রাত্তিরও হতে পারে। প্রথমে সু'র অসুবিধে হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছে। সে সময় সু ব্যাস্ত থাকে বা'কে নিয়ে।
সকলে বসলে শুরু হয় কথা - বা'কে একটু নার্ভাসও লাগছে। রনি যথারীতি চুপ। সু'র টেনশান। ডক্টর আঙ্কল সেন্টার টেবিলে পা তুলে দিয়েছেন, হাতে কফির কাপ।
বা শুরু করেন ধীরে ধীরে। তোমরা সকলেই টিভিতে গতকয়েকদিনের নিউজ দেখছ। আমিও চোখ রাখছি। কিন্তু একটা কথা তোমাদের বলি ঘটনার ঠিক আগের দিনের ভোরে আমি প্রায় জেগে থাকা অবস্থায় এই স্বপ্ন দেখেছি। অবিকল সেই অত্যাচার। মুখগুলোও খুব ঝাপসা অস্পষ্ট। ঠিক বুঝতে পারছি না যোগসূত্রটা কোথায়। খানিক বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করতে যান বা।
ডক্টর আঙ্কল কিছু বলতে গেলে ইশারায় চুপ করিয়ে দেন।
ডক্টর তুমি বলবে এসবই মেটাফিজিক্স - সিউডোসায়েন্স, কিন্তু তুমিই বল স্বপ্নে দেখা ঘটনার রেপ্লিকেশান কি করে হয়? শুধু তাই নয় এরপর যদি বলি আমি আরোও কিছু দেখেছি।
- কি ? ডক্টর আঙ্কল বেশ জোর দিয়েই বলেন।
- তুমি কাঁদছিলে কেন ? সু একটু জোর দিয়েই বলে। স্বপ্নের সাথে তোমার কান্নার সম্পর্ক কি?
রনির সাথে চোখাচোখি হয় সু-এর। রনি এই টোন পছন্দ করছে না। ওর বা'র প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা।
বা খানিক চুপ থেকে মাথা নিচু করে। সোফায় আঙুল চালাতে চালাতে সু'র দিকে তাকায়। আবার চুপ।
সু খানিক বিরক্ত হয়েই বলে - তোমার স্বপ্নের সাথে কান্নার কারন কিভাবে জড়িয়ে আছে?
ওরে টুবুন স্বপ্নটাই তো তাই... আমি কাঁদছি..... শুধুই কাঁদছি। কোনোও কারন নেই। আর দ্যাখ ঘটনাটা তো তাই হলো, আমি কেঁদেছি কোনোও কারন ছাড়াই।
অন্যসময় টুবুন ডাক শুনলে সু রেগে যায় আজ কিছু বলল না। মাথায় ঘুরছে সেই পোকাটা তাহলে কি তার মধ্যেও রয়েছে একই ক্ষমতা...
সেও তো দেখেছে বাপির কান্না কয়েকদিন আগে। শুধু বা'র চেহারাটাই যা আবছায়ার মাঝে ঘেরা ছিল। এক বুড়ো শুধুই কেঁদে চলেছে, বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে ক্রমাগত একটা জালের ভেতর থেকে পারছে না। হঠাৎ দূর থেকে আলোর কনারা বাড়ে সংখ্যায় তীব্রতায় গভীরতায়, ঘিরে ফ্যালে পুরো লোহার জাল। চিৎকার শুনতে না পেলেও বুজতে পারে বা'র সারাটা শরীর জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছে। হাজার বাতির বজ্রপাতের শব্দের ফেরে চৈতন্য হয় সু'র।
সেদিন আর দাড়ায় নি ওখানে। বা'কে কিছু বলেও নি। সকলে চলে গেলেও সু বা'র ঘরের বাইরে পা রাখেনি আর।
দুদিন পর বা'র মুখাগ্নির সময় সু চুপ করে ছিল। আগুনের সামনে শিরশিরে বাতাসের মাঝে দাড়িয়ে মনে পড়ছিল সেই কোন ছেলেবেলার কথা, কিশোরী বয়সের কথা, যুবতী বয়সের বন্ধুতা। আজ বা নেই, শুধু বন্ধুতার অবয়ব রয়ে গেছে। এই অবয়ব দেখেও দেখা যায় না। সব শেষ হলে শিরিশিরে বাতাসে স্নান করে স্টোলটা ভাল করে জড়িয়ে টেনে হাত দুটোকে গুটিয়ে ধরে নিজেকে, মনে-প্রাণে আঁকড়ে ধরে খুঁজতে চায় বা'কে। বাইরের আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলছে বাইরে ভেতরে সর্বত্র! এখন সু বোঝে আগুন শব্দের মর্মার্থটা সঠিক কি।
Comments