প্রেমের রকমফের..
তারে আমি চোখে দেখিনি...
বহুদিনের পুরোনো ছেলেবেলার গান। কার গান কি গান সেই বৃত্তান্তে না যেয়ে নিঃসন্দেহে বলা যায় হিট গান। বাঙালী মাত্রেই এই গান শুনেছে, যদি না শুনে থাকে তাহলে তার বাঙালীপনা সন্দেহে ঘেরা নিশ্চিত। গতকয়েকদিন আগে নিউজ চ্যানেল জানান দিল ফেসবুক প্রেম, অন্লাইন প্রেম ও তার নানান পরিনাম। ভাল ফল নেই তা বলি না। অবশ্য ভাল-খারাপ বলার জন্য লেখা ধরিনি। উদ্দেশ্য নানান প্রেম-এর কথা বলা।
এই লেখার ফাঁকেই দাদা হাঁক পেড়ে এক মহান প্রেমিকের আগমন - সিনেমার প্রেমিক। মানেটা সঠিক বুঝলেন না বোধহয় - সিনেমা বানানোর প্রেমিক। ডাইরেকটার মশাই। কাজ করেন অল্প বলেন বেশি, স্বাভাবিক পরিণতি লোকের কাছে খেলো হওয়া। অলীক বহুদিনের শান্ত নির্বিরধি শ্রোতা - সে শোনে সবকিছুই মন দিয়ে। এতে অলীকের জীবনের পুষ্টিও বাড়ে, সময়ও কাটে, ও নতুন-নতুন উপাদান জোটে। সত্যিই কতরকমের প্রেম-ইলিউশান! গল্পের ছলে তার গল্পগুলো শেয়ার করা নীতিবিরোধী তাই সেগুলো না বলে বলি - একটানা কথা বলা ও একটানা নানান গল্প বলার জন্য নিশ্চিত অন্য কোনোও শক্তির প্রয়োজন হয়। এটাই বোধহয় ঈশ্বরদত্ত। বেশ সময় কাটছিল ওর সাথে অলীকের এক চটকায় কেটে যায় সুর। হঠাৎ উঠে বলে - দাদা ঔর ভি কাহানি হোগি। বাদ মে মিলতে হ্যায় .... গুনগুন করতে-করতে কেটে পড়েন উনি। মাঝেমাঝে অলীকের মনে হয় এরা নিজেরা একেকজন সিনেম্যাটিক মেটিরিয়াল।
এরপর যাঁর কথা পাড়ব তিনি পয়সা প্রেমিক..। এক মেস মালিক - নীলু দা। বাপ-দাদার করা বাড়িতে মেসবাড়ি চালান তিনি। মানুষ খারাপ না তবে ভালও না। সবসময় নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত। প্রাইম লোকেশানে এরকম সস্তায় মেসবাড়ির ব্যাবস্থা পাওয়াও সৌভাগ্যের ব্যাপার। সকালে বেশ খোলা মন নিয়েই বেরিয়েছি, বেরোনোর সময় নীলুদার সাথে দেখাও হয়েছে। একগাল হেসে বলেছেন - কি অলীকবাবু কেমন আছেন?
স্মিত হেসে অলীকের বিদেয় নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। একবার শুরু করলেই ছাড়বে না। তিনি এখন বসে তিনতলার এক ফ্ল্যাট-এ, শেয়ার করছেন তার জীবনের অভিজ্ঞতা! রুমের অবস্থা এইরকম - পাঁচখানি খাট। দুজন বাইরে, একজন বসে উনার শ্রোতা, অন্যজন বাথরুমে, আর অপরজন বেরিয়েছেন রাতে এখনও ফেরেন নি। অবশ্য না ফেরার কারন আর কিছুই নয় নীলুদার মেসেভাড়া বাকি। সে যাই হোক দিনের বেলা বেরিয়ে রাতে ফিরছি, তিনতলায় নীলুদা বসে, ফুলছাপ নীল লুঙ্গি পেট অবধি এসে থেমে যাওয়া গেঞ্জি! যথারীতি একগাল হেসে - কি অলীকবাবু ফিরলেন।
এই মিষ্টি সুরের মানে আর কিছুই নয় - অলীকবাবু আপনারটা কবে পাব।
একটু চাপের মধ্যেই বা ছিল অলীক, তবুও মিষ্টি সুরে বলে - নীলুদা সামনের সপ্তাহে।
রাত বেড়েছে। হঠাৎ চিৎকারে ঘুম উড়ে যায়। ধড়পড়িয়ে অলীক উঠতেই পাশের বেডের কলেজ পড়ুয়ার আওয়াজ - নীলুদা। তিনতলায়।
নিচে নামার সাহস কারোও নেই। সবাই উঁকিঝুঁকি দেয়। অলীকের কানপাতে - তখনও ভেসে আসছে - বাপের ...শালা মেরে ভাসিয়ে দেব... সাতদিন কান্নি দেওয়া.. নীলুদাকে.। .... শেষমেষ শাপশাপান্ত-বাপবাপান্ত করে নীলুদা নামেন নিজের ফ্ল্যাট-এ। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে অলীক রাত্তির সাড়ে-বারোটা। এই ছিল নীলুদার মেসবাড়ি ও তার কলেজপড়ুয়া বোর্ডারেরা।
পরদিন সকালেই মেসবাড়ি যথারীতি ফুলফর্মে। সকলে ব্যাস্ত।
নীলুদার অন্য এক রুপ না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায় লেখাটি - অলীকের প্রেমিকা বিচ্ছেদ হয়েছে। সাথে গেছে বহু কিছু। সম্পর্ক যখন যায় সাথে নিয়ে যায় বহু কিছু। পাগলের মত অলীক রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরেছে সেসময়, কি খুঁজেছে জানে না কিন্তু প্রাপ্তির ভাঁড়ার শুণ্য। বলে - তুমি যখন শূণ্য আমি তখন পূর্ণ। এক রাতে অলীক বাড়ি ঢুকেছে মাঝরাতে, উদ্দেশ্য নীলুদাকে এড়ানো। কাজ নেই তাই দেবার টাকাও নেই। কিন্তু নীলুদা এলেন, ডাক পাড়লেন - অলীকবাবু, আপনারটা এমাসে থাক।
পরদিন সকালে নীলুদার একটা কথা ভুলতে পারে না অলীক - অলীকবাবু মনে রাখবেন - দেহ পটে সনে নটে সকলি হারায়...
প্রায় শতাধিক ছেলেপিলের নানান ঝক্কি পুইয়েও নীলুদা তার বিশাল বপু নিয়ে সদর্পে মেসবাড়ি বজায় রেখেছিলেন।
এবার আসি তৃতীয় প্রেমকাহীনিতে - এক বাচ্চা ছেলেবেলায় গাড়ির প্রেমে পড়ে। নানান মডেলের খেলনা গাড়ি তার জীবনের অংশ ছিল। বাবার হাত ধরে সে সব আবদারই মিটিয়েছে। গাড়ি কেনা-ভাঙা-সারানো এই ছিল তার নেশা। রাস্তায় যেতে-যেতে সে শুধুই গাড়ি দেখত। একেকটা গাড়ির মুখ একেকরকম তার মনে হতো। কোনোও গাড়ির দাঁত উঁচু, তো কোনোওটার দাঁত থেবড়া। এই ছিল তার কল্পনা।
ছেলেবেলা পেরিয়ে বড়বেলা এসেছে, কিন্তু গাড়ি প্রীতি কমেনি। শুধু একটা কথা ভোলে নি তার পাপার - অন্যকিছু কোরো না গাড়ি নিয়েই থেকো জীবনে।
ছেলেটি বড় হয়ে গাড়ি নিয়েই থেকেছে, এখন তার কল্পনা কাজে লাগে ভবিষ্যতের গাড়ির ডিজাইন-এ। নানান গাড়ির ডিজাইনের মধ্যে সে খুঁজে বেড়ায় ছেলেবেলার কল্পনার গাড়িগুলি। তার ছেলেবেলার দিনগুলি..
দাদা.... ডাক শুনেই বোঝে সেই ডাইরেকটার মশাই। আবার এসেছে ফিরে। উৎসাহ নিয়ে বসায় অলীক যদি কিছু বাড়ে প্রাপ্তির ভাঁড়ারে। একথা-সেকথার শেষে দেখায় নিজের ফ্ল্যাট-এর ড্রয়িং-রুমের ছবি - একপাশে গিটার, সামনে বসানো ছোট্ট একটি পলিশ্ড টেবিল, আর দেওয়াল জুড়ে সিনেমার ওরিজিনাল পোস্টার।
আমার উৎসাহ দেখে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে -
দাদা এ দেখা। খালি বাস্ এক হি জাগা খালি হ্যায়। কালা পাথ্বার কা পোস্টার লাগানা হ্যায়।
অলীক চুপ থাকে, ভাবে এও এক প্রেম না পাগলামি!!!
বহুদিনের পুরোনো ছেলেবেলার গান। কার গান কি গান সেই বৃত্তান্তে না যেয়ে নিঃসন্দেহে বলা যায় হিট গান। বাঙালী মাত্রেই এই গান শুনেছে, যদি না শুনে থাকে তাহলে তার বাঙালীপনা সন্দেহে ঘেরা নিশ্চিত। গতকয়েকদিন আগে নিউজ চ্যানেল জানান দিল ফেসবুক প্রেম, অন্লাইন প্রেম ও তার নানান পরিনাম। ভাল ফল নেই তা বলি না। অবশ্য ভাল-খারাপ বলার জন্য লেখা ধরিনি। উদ্দেশ্য নানান প্রেম-এর কথা বলা।
এই লেখার ফাঁকেই দাদা হাঁক পেড়ে এক মহান প্রেমিকের আগমন - সিনেমার প্রেমিক। মানেটা সঠিক বুঝলেন না বোধহয় - সিনেমা বানানোর প্রেমিক। ডাইরেকটার মশাই। কাজ করেন অল্প বলেন বেশি, স্বাভাবিক পরিণতি লোকের কাছে খেলো হওয়া। অলীক বহুদিনের শান্ত নির্বিরধি শ্রোতা - সে শোনে সবকিছুই মন দিয়ে। এতে অলীকের জীবনের পুষ্টিও বাড়ে, সময়ও কাটে, ও নতুন-নতুন উপাদান জোটে। সত্যিই কতরকমের প্রেম-ইলিউশান! গল্পের ছলে তার গল্পগুলো শেয়ার করা নীতিবিরোধী তাই সেগুলো না বলে বলি - একটানা কথা বলা ও একটানা নানান গল্প বলার জন্য নিশ্চিত অন্য কোনোও শক্তির প্রয়োজন হয়। এটাই বোধহয় ঈশ্বরদত্ত। বেশ সময় কাটছিল ওর সাথে অলীকের এক চটকায় কেটে যায় সুর। হঠাৎ উঠে বলে - দাদা ঔর ভি কাহানি হোগি। বাদ মে মিলতে হ্যায় .... গুনগুন করতে-করতে কেটে পড়েন উনি। মাঝেমাঝে অলীকের মনে হয় এরা নিজেরা একেকজন সিনেম্যাটিক মেটিরিয়াল।
এরপর যাঁর কথা পাড়ব তিনি পয়সা প্রেমিক..। এক মেস মালিক - নীলু দা। বাপ-দাদার করা বাড়িতে মেসবাড়ি চালান তিনি। মানুষ খারাপ না তবে ভালও না। সবসময় নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত। প্রাইম লোকেশানে এরকম সস্তায় মেসবাড়ির ব্যাবস্থা পাওয়াও সৌভাগ্যের ব্যাপার। সকালে বেশ খোলা মন নিয়েই বেরিয়েছি, বেরোনোর সময় নীলুদার সাথে দেখাও হয়েছে। একগাল হেসে বলেছেন - কি অলীকবাবু কেমন আছেন?
স্মিত হেসে অলীকের বিদেয় নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। একবার শুরু করলেই ছাড়বে না। তিনি এখন বসে তিনতলার এক ফ্ল্যাট-এ, শেয়ার করছেন তার জীবনের অভিজ্ঞতা! রুমের অবস্থা এইরকম - পাঁচখানি খাট। দুজন বাইরে, একজন বসে উনার শ্রোতা, অন্যজন বাথরুমে, আর অপরজন বেরিয়েছেন রাতে এখনও ফেরেন নি। অবশ্য না ফেরার কারন আর কিছুই নয় নীলুদার মেসেভাড়া বাকি। সে যাই হোক দিনের বেলা বেরিয়ে রাতে ফিরছি, তিনতলায় নীলুদা বসে, ফুলছাপ নীল লুঙ্গি পেট অবধি এসে থেমে যাওয়া গেঞ্জি! যথারীতি একগাল হেসে - কি অলীকবাবু ফিরলেন।
এই মিষ্টি সুরের মানে আর কিছুই নয় - অলীকবাবু আপনারটা কবে পাব।
একটু চাপের মধ্যেই বা ছিল অলীক, তবুও মিষ্টি সুরে বলে - নীলুদা সামনের সপ্তাহে।
রাত বেড়েছে। হঠাৎ চিৎকারে ঘুম উড়ে যায়। ধড়পড়িয়ে অলীক উঠতেই পাশের বেডের কলেজ পড়ুয়ার আওয়াজ - নীলুদা। তিনতলায়।
নিচে নামার সাহস কারোও নেই। সবাই উঁকিঝুঁকি দেয়। অলীকের কানপাতে - তখনও ভেসে আসছে - বাপের ...শালা মেরে ভাসিয়ে দেব... সাতদিন কান্নি দেওয়া.. নীলুদাকে.। .... শেষমেষ শাপশাপান্ত-বাপবাপান্ত করে নীলুদা নামেন নিজের ফ্ল্যাট-এ। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে অলীক রাত্তির সাড়ে-বারোটা। এই ছিল নীলুদার মেসবাড়ি ও তার কলেজপড়ুয়া বোর্ডারেরা।
পরদিন সকালেই মেসবাড়ি যথারীতি ফুলফর্মে। সকলে ব্যাস্ত।
নীলুদার অন্য এক রুপ না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায় লেখাটি - অলীকের প্রেমিকা বিচ্ছেদ হয়েছে। সাথে গেছে বহু কিছু। সম্পর্ক যখন যায় সাথে নিয়ে যায় বহু কিছু। পাগলের মত অলীক রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরেছে সেসময়, কি খুঁজেছে জানে না কিন্তু প্রাপ্তির ভাঁড়ার শুণ্য। বলে - তুমি যখন শূণ্য আমি তখন পূর্ণ। এক রাতে অলীক বাড়ি ঢুকেছে মাঝরাতে, উদ্দেশ্য নীলুদাকে এড়ানো। কাজ নেই তাই দেবার টাকাও নেই। কিন্তু নীলুদা এলেন, ডাক পাড়লেন - অলীকবাবু, আপনারটা এমাসে থাক।
পরদিন সকালে নীলুদার একটা কথা ভুলতে পারে না অলীক - অলীকবাবু মনে রাখবেন - দেহ পটে সনে নটে সকলি হারায়...
প্রায় শতাধিক ছেলেপিলের নানান ঝক্কি পুইয়েও নীলুদা তার বিশাল বপু নিয়ে সদর্পে মেসবাড়ি বজায় রেখেছিলেন।
এবার আসি তৃতীয় প্রেমকাহীনিতে - এক বাচ্চা ছেলেবেলায় গাড়ির প্রেমে পড়ে। নানান মডেলের খেলনা গাড়ি তার জীবনের অংশ ছিল। বাবার হাত ধরে সে সব আবদারই মিটিয়েছে। গাড়ি কেনা-ভাঙা-সারানো এই ছিল তার নেশা। রাস্তায় যেতে-যেতে সে শুধুই গাড়ি দেখত। একেকটা গাড়ির মুখ একেকরকম তার মনে হতো। কোনোও গাড়ির দাঁত উঁচু, তো কোনোওটার দাঁত থেবড়া। এই ছিল তার কল্পনা।
ছেলেবেলা পেরিয়ে বড়বেলা এসেছে, কিন্তু গাড়ি প্রীতি কমেনি। শুধু একটা কথা ভোলে নি তার পাপার - অন্যকিছু কোরো না গাড়ি নিয়েই থেকো জীবনে।
ছেলেটি বড় হয়ে গাড়ি নিয়েই থেকেছে, এখন তার কল্পনা কাজে লাগে ভবিষ্যতের গাড়ির ডিজাইন-এ। নানান গাড়ির ডিজাইনের মধ্যে সে খুঁজে বেড়ায় ছেলেবেলার কল্পনার গাড়িগুলি। তার ছেলেবেলার দিনগুলি..
দাদা.... ডাক শুনেই বোঝে সেই ডাইরেকটার মশাই। আবার এসেছে ফিরে। উৎসাহ নিয়ে বসায় অলীক যদি কিছু বাড়ে প্রাপ্তির ভাঁড়ারে। একথা-সেকথার শেষে দেখায় নিজের ফ্ল্যাট-এর ড্রয়িং-রুমের ছবি - একপাশে গিটার, সামনে বসানো ছোট্ট একটি পলিশ্ড টেবিল, আর দেওয়াল জুড়ে সিনেমার ওরিজিনাল পোস্টার।
আমার উৎসাহ দেখে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে -
দাদা এ দেখা। খালি বাস্ এক হি জাগা খালি হ্যায়। কালা পাথ্বার কা পোস্টার লাগানা হ্যায়।
অলীক চুপ থাকে, ভাবে এও এক প্রেম না পাগলামি!!!
Comments